আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস
আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস
২০১০ সালের ২৯ জুলাই। আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস (International Tiger Day)। প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্বজুড়ে পালিত হয় এই দিনটি। বিশ্বজুড়ে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। বন উজাড়, অবৈধ শিকার ও মানব-বন্যপ্রাণী দ্বন্দ্ব প্রধান হুমকি। তবে ভারত, নেপাল ও রাশিয়ার মতো কিছু দেশে সংরক্ষণ কার্যক্রম সাফল্য পেয়েছে।বাঘ দিবস পালনের উদ্দেশ্য :
এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হল —
- বাঘ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা
- বাঘের প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা।
- ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা (যা ‘TX2’ লক্ষ্য নামে পরিচিত)। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিটি দেশ নিজ নিজ পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
- বাঘের অবৈধ শিকার ও বাণিজ্য রোধ করা।
বাঘ দিবসের সূচনা :
২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ‘টাইগার সামিট’-এ (বাঘ শীর্ষ সম্মেলন) এই দিবসের সূচনা হয়। এই সম্মেলনে বাঘের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ১৩টি দেশ একত্রিত হয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য নির্ধারণ করে। সিদ্ধান্ত হয় ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা (যা ‘TX2' লক্ষ্য নামে পরিচিত) হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিটি দেশ নিজ নিজ পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
তাৎপর্য ও গুরুত্ব
সংরক্ষণ ও সচেতনতা:
বাঘ পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এবং বিপন্ন প্রাণীদের মধ্যে একটি। গত এক শতাব্দীতে চোরাশিকার, বনাঞ্চল ধ্বংস এবং মানুষের বসতি বৃদ্ধির কারণে বাঘের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে। বাঘ দিবস এই বিপন্ন প্রজাতিকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য:
বাঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ শিকারী প্রাণী এবং এটি একটি সুস্থ বাস্তুতন্ত্রের পরিচায়ক। বাঘের সংখ্যা কমে গেলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বাঘের সংরক্ষণ তাই সামগ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য।
সরকার ও সংস্থাগুলির ভূমিকা:
এই দিনে বিভিন্ন সরকার, পরিবেশবাদী সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে বাঘ সংরক্ষণে কাজ করার অঙ্গীকার করে। শিক্ষামূলক কার্যক্রম, তহবিল সংগ্রহ এবং বাঘের আবাসস্থল রক্ষা ও শিকার প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
সাফল্যের উদযাপন:
‘আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস’ বাঘ সংরক্ষণে অর্জিত সাফল্যগুলো উদযাপন করারও একটি সুযোগ। যেমন, ভারত, নেপাল এবং ভুটান বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই দিনে বিভিন্ন দেশে সেমিনার, প্রদর্শনী ও গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজিত হয়। বাঘ রক্ষা করতে সবাইকে প্রকৃতি সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী পাচার বিরোধী কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ভারতের প্রেক্ষাপটে
ভারত বাঘের অন্যতম প্রধান আবাসস্থল এবং এখানে বিশ্বের প্রায় ৭০% বাঘের বসবাস। তাই ভারতের জন্য বাঘ দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাঘ ভারতের জাতীয় পশু হওয়ায় এই দিনটি ভারতে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়। সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ভারতের ‘প্রজেক্ট টাইগার’ (১৯৭৩ সালে শুরু) বাঘ সংরক্ষণে বিশ্বজুড়ে একটি সফল মডেল হিসেবে বিবেচিত।২০০৬ সালে দেশে প্রথম বিজ্ঞানসম্মত শুমারি হয়। জানা যায় দেশে মাত্র ১৪১১ টা বাঘ রয়েছে। এরপর ভারত জুড়ে চালানো হয় প্রচার। ঘোষণা করা হয়, বাগ মানেই সে হামলা করে না। বাঘ বাঁধলেই জঙ্গলের খাদ্য শৃংখল বাঁচে। প্রায় কুড়ি বছর পেরিয়ে এখন দেশে বাঘের সংখ্যা প্রায় চার হাজার।
সংক্ষেপে, আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস কেবল একটি নির্দিষ্ট প্রাণীর জন্য নয়, বরং আমাদের পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন