মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজীর রাজ্যভিষেক
মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজীর রাজ্যভিষেক :
Coronation of Shivaji, founder of the Maratha Empire
১৬৭৪ সালের ৬ জুন। স্বাধীন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজী ভোঁসলের রাজ্যাভিষেক হয়। এই দিন তিনি ‘ছত্রপতি’ উপাধি ও মুকুট ধারণ করেন। মারাঠা সাম্রাজ্যের রাজধানী হয় রায়গড়।ছত্রপতি শিবাজী (১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৬৩০ - ৩ এপ্রিল, ১৬৮০) ছিলেন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী শাসক এবং সামরিক কৌশলী, যিনি মুঘল ও বিজাপুরের আদিলশাহী সালতানাতের মতো শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে একটি স্বাধীন মারাঠা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
শিবাজী ১৬৩০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বর্তমান মহারাষ্ট্রের শিবনেরি পার্বত্য দুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন শাহজী ভোঁসলে (বিজাপুর সুলতানির সেনাপতি) এবং মাতা ছিলেন জীজাবাঈ। শৈশবে তিনি তার মাতা এবং গুরু দাদুজি কোন্ডদেবের কাছে নৈতিকতা, ধর্ম এবং সামরিক প্রশিক্ষণের শিক্ষা লাভ করেন।
স্বাধীনতার স্বপ্ন:
শিবাজী অল্প বয়স থেকেই একটি স্বাধীন হিন্দু রাজ্য (হিন্দবী স্বরাজ্য) প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি বিভিন্ন মারাঠা প্রধানদের একত্রিত করে একটি ছোট রাজ্য গঠন করেন।
সামরিক কৃতিত্ব:
শিবাজী তাঁর সুসংগঠিত সামরিক বাহিনী এবং গেরিলা যুদ্ধের কৌশল (গানিমি কাভা) ব্যবহার করে বিজাপুরের আদিলশাহী এবং মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অসংখ্য যুদ্ধে জয়লাভ করেন। তার সামরিক কৌশলগুলি শত্রুদের উপর আকস্মিক আক্রমণ এবং দ্রুত পশ্চাদপসরণে অত্যন্ত কার্যকর ছিল। তিনি ১৬৫৬ সালে তোরানের দুর্গ দখল করে তার সামরিক অভিযান শুরু করেন।
ছত্রপতি উপাধি গ্রহণ:
১৬৭৪ সালের ৬ জুন তিনি রায়গড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ছত্রপতি’ উপাধি গ্রহণ করেন, যা মারাঠা সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্বের প্রতীক ছিল। এই অভিষেক ছিল ভারতীয় ইতিহাসে দীর্ঘকাল পর একজন হিন্দু রাজার রাজ্যাভিষেক।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা:
শিবাজী শুধু একজন যোদ্ধা ছিলেন না, একজন দক্ষ প্রশাসকও ছিলেন। তিনি একটি সুসংগঠিত শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তার ‘অষ্টপ্রধান মন্ডল’ (আট মন্ত্রীর পরিষদ) ছিল তার প্রশাসনের মূল ভিত্তি। তিনি ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎখাত করে রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত চালু করেন।
ধর্মীয় সহনশীলতা:
শিবাজী নিজে একজন হিন্দু হয়েও সকল ধর্মের প্রতি সহনশীল মনোভাব পোষণ করতেন। তিনি তার রাজসভায় ফারসি ভাষার পরিবর্তে মারাঠি ও সংস্কৃত ভাষার প্রচলন করেন।
নৌবাহিনীর গুরুত্ব:
শিবাজী একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলেন, যা পর্তুগিজ ও ব্রিটিশদের মতো বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে মারাঠা উপকূল রক্ষা করতে সহায়ক হয়েছিল।
শিবাজী মৃত্যু:
৩ এপ্রিল, ১৬৮০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর উত্তরাধিকারী সম্ভাজী মারাঠা শক্তি বিস্তার চালিয়ে যান।
শিবাজী ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সামান্য এক জায়গিরদারের পুত্র হয়েও তিনি নিজের প্রতিভাবলে স্বাধীন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীকালে ভারতের এক বিশাল অংশে প্রভাব বিস্তার করেছিল। তার দূরদর্শিতা, সামরিক দক্ষতা এবং সুষম প্রশাসনিক নীতি তাঁকে ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন