শুভাংশু শুক্লার মহাকাশ পাড়ি
শুভাংশু শুক্লার মহাকাশ পাড়ি
![]() |
শুভাংশু শুক্লার মহাকাশ পাড়ি |
Subhanshu Shukla's space journey
২০২৫ সালের ২৫ জুন বুধবার বেলা ১২টা ০১ মিনিটে শুভাংশু শুক্লা মহাকাশে পাড়ি দিয়েছেন। গন্তব্য ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন। তিনি হলেন দ্বিতীয় ভারতীয় (প্রথম ভারতীয় রাকেশ শর্মা), যিনি মহাকাশ পাড়ি দিলেন। তবে, তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’-এ যাচ্ছেন। আমেরিকার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেটে করে তিনি যাত্রা শুরু করেন।
শুভাংশু শুক্লার পরিচয় :
১৯৮৫ সালে উত্তরপ্রদেশের লখনৌ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শম্ভু দয়াল শুক্লা। মায়ের নাম আশা শুক্লা। স্ত্রী কামনা শুক্লা।
সুভাংশুর স্কুল জীবন শুরু হয় লাখনৌয়ের সিটি মন্টেসরি স্কুলে।
স্কুল শেষ করে স্নাতক পড়তে ভর্তি হন ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমি’তে। এরপর ২০০৬ সালে যোগদান ভারতীয় বায়ু সেনায়। তারপর আইআইএসসি ব্যাঙ্গালোর থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ এমটেক করেন। ২০১৯ সালে গগনযান হিউম্যান স্পেসফ্লাইটে অংশ নেওয়ার পরেই এই অ্যাক্সিওম মিশন-৪ এর ক্যাপ্টেন হিসেবে নির্বাচিত হন।
মহাকাশ অভিযানের সূচনা :
ভারতীয় সময় ঠিক দুপুর ১২ঃ০১ মিনিট। আমেরিকার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে যাত্রা শুরু করে স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন নাইন রকেটের মার্লিন ইঞ্জিন। এই মিশনের নাম দেয়া হয়েছে অ্যাক্সিয়াম মিশন ফোর।
উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সালে এই কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকেই চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন নীল আর্মস্ট্রং, এডুইন অলড্রিন এবং মাইকেল কলিংস।
শুভাংশু শুক্লা এবং তার সহযোগী তিনজন মহাকাশচারীকে নিয়ে উৎক্ষেপনের ঠিক ৮ মিনিটের মাথায় লাঞ্চপ্যাডে ফিরে আসে ফ্যালকন নাইন রকেট। অর্থাৎ চার মহাকাশচারীসহ ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলকে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে ফ্যালকন নাইন।
আরো পড়ুন : রাকেশ শর্মার মহাকাশ অভিযান
এরপর শুরু হয় মূল অভিযানের প্রস্তুতি। প্রায় ২৮ ঘণ্টা ধরে ড্র্যাগন ক্যাপসুল ধীরে ধীরে কক্ষপথ এবং গতি সামঞ্জস্য করে ISS-এর কক্ষপথে পৌঁছে যায়। পৃথিবী থেকে ৪১৮ কিলোমিটার উচ্চতায়, প্রতি ঘণ্টায় ১৭,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে চলতে চলতে নভোচারীরা মাইক্রোগ্রাভিটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেন। ড্র্যাগন ক্যাপসুলের ডকিং প্রক্রিয়া ছিল একেবারে নিখুঁত এবং ত্রুটিহীন বলেই জানা গেছে।
মহাকাশ অভিযানের উদ্দেশ্য :
ভারতের কাছে এই অভিযানটি একাধিক কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রথমত, ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মার মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার ৪১ বছর পরে ফের মহাকাশে পৌঁছলেন এক ভারতীয়।
- দ্বিতীয়ত, আগামী বছর ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো সম্পূর্ণ ভারতীয় উদ্যোগে মহাকাশে চারজনকে পাঠাতে চায়।
- তৃতীয়ত, আগামী বছরের এই মিশন যা গগন জান নামে পরিচিত, তার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা সুভাংশুর। তাই গগনজানের আগে দলনেতার মহাকাশে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত জরুরী ছিল।
- চতুর্থত, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরে মহাকাশে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত থেকে ১৪ দিন ধরে অন্তত ৬০ রকমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে গবেষণা চালানো।
মহাকাশ অভিযানের সহযাত্রী :
গগনযান মিশনের সম্ভাব্য নেতা এবং বর্তমান অভিযানের গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা সহ তাঁর এই অভিযানে যুক্ত হয়েছেন আরও তিনজন মহাকাশচারী। এঁরা হলেন
১) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পেগি হুইটসন,
২) পোল্যান্ড এর স্লাওজ উজনানস্কি, এবং
৩) হাঙ্গেরির টিবর কাপু।
মহাকাশ অভিযান সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া :
অবশেষে সাতবার বাধার পরে ২০২৫ সালের ২৫ জুন তিনি মহাকাশে পাড়ি দেন। মহাকাশ থেকে শুভাংশু শুক্লা বলেন, “দারুন সফর! আমার কাঁধে থাকা তেরাঙ্গা প্রতিমুহূর্তে জানান দিচ্ছে—আমি দেশবাসীর সঙ্গেই রয়েছি।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “১৪০ কোটি দেশবাসীর স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে যাচ্ছেন শুক্লা।”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন