বিখ্যাত : তথ্য। তারিখ। মাস। বছর। বিষয়। ব্যক্তি খুঁজুন :

উদ্ভাবন-চালিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কী

উদ্ভাবন-চালিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কী?

What is innovation-driven economic growth?

উদ্ভাবন চালিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’(innovation-driven economic growth)-র উদ্ভাবক হলেন জোয়েল মোকির। তিনি একজন অর্থনৈতিক ইতিহাসের অধ্যাপক। তাঁর এই তত্ত্বের মূলকথা হলো —সমাজ যদি নতুন প্রযুক্তি ও নতুন জিনিসকে গ্রহণ করতে রাজি না হয়, তাহলে নয়া উদ্ভাবনের ফলে যে উন্নয়নের জোয়ার আসার কথা, তা আটকে যায়। আর তা গ্রহণ করলে ‘দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ ঘটে।

জোয়েল মোকির এই ‘উদ্ভাবন চালিত প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেখিয়েছেন, এর জন্য প্রয়োজন ‘কার্যকর জ্ঞানে’র একটি নিরন্তর প্রবাহ । এই কার্যকর জ্ঞান-এর দুটি অংশ রয়েছে। প্রথমটি হল— ‘প্রস্তাবমূলক জ্ঞান’ (propostional knowledge) এবং দ্বিতীয়টি হল— ‘নির্দেশকমূলক জ্ঞান’ (prescriptive knowledge)। প্রস্তাবমূলক জ্ঞান হল প্রাকৃতিক জগতের নিয়ম-কানুনের একটি পদ্ধতিগত বর্ণনা, যা আমাদের দেখায়, বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক নিয়মগুলো কেন কাজ করে। আর ‘নির্দেশমূলক জ্ঞান’ হল কিছু ব্যবহারিক নির্দেশাবলী, অংকন ইত্যাদি যা বর্ণনা করে, এই কাজ করার জন্য ঠিক কি কি প্রয়োজন

বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য মোকির দেখান, শিল্প বিপ্লবের আগে, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন হতো, এবং সেগুলো কাজ করতো মূলত নির্দেশমূলক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে। তাই মানুষ জানতো কোন্ প্রযুক্তি কী কাজ করে। কিন্তু জানতো না, কেন কাজ করে। অর্থাৎ এই সময়ে গণিত এবং প্রাকৃতিক দর্শনের মত প্রস্তাবমূলক জ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই নির্দেশমূলক জ্ঞান গড়ে উঠতো। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন কঠিন হতো এবং কখনও কখনও তা ব্যর্থ হতো।

জোয়েল মোকির তাঁর তত্ত্বের ব্যাখ্যায় এটাও উল্লেখ করেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রথম তখন শুরু হয়েছিল, যখন নির্দেশমূলক এবং প্রস্তাবমূলক জ্ঞানের মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি হয়েছিল। এবং সেইসঙ্গে অবশ্যই টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক, প্রযুক্তিগত এবং বাণিজ্যিক জ্ঞানের পাশাপাশি, পরিবর্তনের জন্য যে উন্মুক্ত সমাজের প্রয়োজন হয়, তাও তৈরি হয়েছিল।

জোয়েল মোকির ইতিহাস ঘেঁটে দেখিয়েছেন যে, প্রযুক্তির বিবর্তন এবং মানুষের মধ্যে তা গ্রহণের আগ্রহ কীভাবে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে ‘জ্বালানি’ হিসেবে কাজ করে। তাঁর মতে, শিল্প বিপ্লবের আগে নতুন কোন উদ্ভাবনার চেষ্টাই ছিল না। ফলে অর্থনীতিও এগোয়নি। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের ফলে নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার এবং মানুষের মধ্যে তা গ্রহণ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবার ফলে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটেছে। এই অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হাত ধরেই বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনধারণের মান উন্নত হয়েছে।

সুইডেনের ‘রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস’ (The Royal Swedish Academy of Sciences) জোয়েল মোকির তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, “প্রযুক্তির উন্নয়ন একটা চাকার মত চলতেই থাকে। পুরনো প্রযুক্তি যায়, নতুন প্রযুক্তি আসে। আর সেটাই দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (সাসটেন্ড ইকোনোমিক গ্রোথ) মূল ভিত্তি। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হাত ধরেই বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনধারণের মান উন্নত হয়। 

তবে, এটা কিন্তু বরাবরের ট্রেন্ড ছিল না। বরং মানব সভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, বছরের পর বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতির এক জায়গায় থমকে থাকাই ছিল দস্তর। গত দুই দশকে এই ছবিটা বদলেছে। পুরো বিশ্বই এখন স্থায়ী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সাক্ষী। এটাই নিউ নরমাল। আর সেই অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হাত ধরেই অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠে এসেছেন। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। নোবেলজয়ীরা ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে নিত্যনতুন উদ্ভাবন অর্থনীতির এই জয়যাত্রাকে বাস্তবায়িত করেছে।”

প্রকৃতপক্ষে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় নবজাগরণের ফলে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। বিজ্ঞানীরা সুনির্দিষ্ট পরিমাপ পদ্ধতি, নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ফলাফল যাচাইয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। ফলে প্রস্তাবনামূলক এবং নির্দেশমূলক জ্ঞানের মধ্যে সমন্বয় বা সংযোগ সাধিত হয়। ফলে প্রযুক্তি-নির্ভর পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদনে ব্যবহারযোগ্য এবং দরকারি জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ এবং ভ্যাকুয়াম সম্পর্কে সমসাময়িক অন্তর্দৃষ্টির কারণে বাষ্পীয় ইঞ্জিন কীভাবে উন্নত হলো এবং অক্সিজেন কীভাবে গলিত পিগ আয়রন থেকে কার্বনের পরিমাণ কমিয়ে ইস্পাত উৎপাদনে অগ্রগতি ঘটালো, তার কথা।

উদ্ভাবন চালিত টেকসই প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব কার্যকরী করতে হলে ব্যবহারিক, প্রযুক্তিগত এবং বিশেষ করে বাণিজ্যিক জ্ঞান ইত্যাদির সবকিছুই অত্যন্ত জরুরী। কারণ, এগুলো ছাড়া, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির হেলিকপ্টার তৈরীর নকশা যেমন অঙ্কন বোটে থেকে গিয়েছিল, তেমনই পরিণতি হবে। মোকির দেখিয়েছেন, এই ধরনের টেকসই প্রবৃদ্ধি প্রথমে বৃটেনে দেখা গিয়েছিল। কারণ, ব্রিটেনে অনেক দুঃখ কারিগর এবং প্রকৌশলী ছিলেন। তারা নকশা বুঝতে এবং এই ধারণা গুলিকে বাণিজ্যিক পণ্যে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

মোকির তাঁর তত্ত্বের দাবি করেন, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন একটি উন্মুক্ত সমাজ যা পরিবর্তনকে সহজে মেনে নেয়। কারণ, প্রযুক্তি চালিত টেকসই প্রবৃদ্ধি যেমন কারও কারও সাফল্য এনে দেয়, ঠিক তেমনি অনেকেই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অর্থাৎ অর্থাৎ নতুন উদ্ভাবন পুরনো উদ্ভাবনকে সরিয়ে নতুনকে প্রতিস্থাপন করে। ফলে, নতুন প্রযুক্তি প্রায়শেই পুরনো প্রযুক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বার্থ গোষ্ঠীর প্রবল প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। কারণ তারা মনে করে, নতুন প্রযুক্তি তাদের রুটি রুজির হুমকি হয়ে আসবে। 

সেই সঙ্গে জোয়েল মোকির ঐতিহাসিক তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন, নবজাগরণ প্রসূত জ্ঞানদীপ্তির ফলে মানুষের মধ্যে নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করার প্রবণতা বাড়ে। অন্যদিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নতুন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং পুরনোদের সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। ফলে ব্রিটেনের টেকসই প্রবৃদ্ধির সামনে এই বাধা দূর হয়।

এভাবে জোয়েল মোকির তার ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উপকরণ চিহ্নিত করেন। 

উল্লেখ্য এই তত্ত্বের (উদ্ভাবন চালিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’(innovation-driven economic growth) ব্যাখ্যা করে জোয়েল মোকির ২০২৫ সালের অর্থনীতি বিষয়ে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। যদিও এই পুরস্কার তিনি ফিলিপ আঘিওন এবং পিটার হাউইট-এর সঙ্গে যৌথভাবে লাভ করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন এখানে

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন, জোয়েল মোকির যেখানে ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে টেকসই প্রবৃদ্ধি তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন, সেখানে আধুনিক তথ্যের ভিত্তিতে ফিলিফ অ্যাঘিওন ও পিটার হাউইট একটি গাণিতিক অর্থনৈতিক মডেল তৈরি করে ঠিক একই কাজ করেছেন। এই মডেলের সাহায্যে তারা দেখিয়েছেন প্রযুক্তিগত অগ্রগতি কীভাবে টেকসই প্রবৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। এই গাণিতিক মডেল সৃজনশীল ধ্বংস (The theory of sustained growth through Creative Destruction) নামে পরিচিত। এই তত্ত্বের মাধ্যমে
------------xx-----------

মন্তব্যসমূহ

🔰 তারিখ অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন : 🔍

আরও দেখান

🔰 মাস অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন : 🔍

🔰 বছর অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন : 🔍

আরও দেখান

🔰 ব্যক্তি অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন : 🔍

আরও দেখান

🔰 বিষয় অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন :🔍

আরও দেখান

🔰 তথ্য তালাশ : জনপ্রিয় ব্যক্তি ও বিষয়গুলো দেখুন:

উসেইন বোল্ট, ১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ড

বিশ্ব অ্যালজেইমার্স দিবস

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মদিন

শুভাংশু শুক্লার মহাকাশ পাড়ি

ভারতের জাতীয় প্রতীকের নকশাকার

প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ার-এর জন্মদিন

জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ

আন্তর্জাতিক সাইকেল দিবস

তথ্য তালাশ : অনলাইন সংকলন

আলী হোসেন, লেখক,
তথ্য তালাশ
সুপ্রিয় পাঠক,

তথ্য তালাশ-এর অনলাইন সংকলনে আপনাকে স্বাগত। 

প্রতিদিন, প্রতি নিয়ত বিশ্বজুড়ে ঘটে চলেছে নানান ঘটনা। কিছু বিখ্যাত, কিছু অখ্যাত, আবার কিছু কুখ্যাতও। এই সব হরেক ঘটনার মধ্যে থাকে এমন কিছু ঘটনা, যা মানুষ মনে রাখতে চায়, চায় স্মরণ করতে।

তথ্য তালাশ সেই লক্ষ্য নিয়েই তৈরি। যেহেতু এটি ডিজিটাল ফরম্যাটে তৈরি, তাই যখনই প্রয়োজন পড়বে, আপনার হাতের মোবাইলে হাত রাখলেই আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মত সামনে হাজির হবে তথ্য তালাশ

আপনি কি পড়তে চান এই সংকলনটি! ক্লিক করুন এখানে