বিশ্ব অ্যালজেইমার্স দিবস
বিশ্ব অ্যালজেইমার্স দিবস
![]() |
বিশ্ব অ্যালজেইমার্স দিবস |
World Alzheimer's Day
১৯৯৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। বিশ্ব অ্যালজাইমার্স দিবস। ১৯৯৪ সালে প্রথমবার এই দিনটি আলজাইমার্স দিবস হিসাবে পালিত হয়েছিল । ২০১২ সাল থেকে ২১শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব অ্যালজাইমার্স দিবস পালনের পাশাপাশি সেপ্টেম্বর মাসটিকে ‘বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স মাস’ হিসেবে পালন করা হয়, যাতে সারা মাস জুড়ে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালানো যায়।
“বিশ্বজুড়ে ৫৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই ভয়াবহ রোগে (অ্যালঝাইমার্স) আক্রান্ত হয়।”
অ্যালঝাইমার্সের ঝুঁকি ও কিছু তথ্য :
প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন বয়স্ক ব্যক্তি আলঝাইমার বা অন্য কোনও ডিমেনশিয়ায় মারা যান। এটি স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের চেয়েও বেশি মৃত্যু ঘটায়। ভারতে এই মুহূর্তে ৬০ লক্ষ মানুষ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন যার অন্যতম প্রধান কারণ অ্যালঝাইমার্স।
অ্যালঝাইমার্স রোগে স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের চেয়েও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
রোগের কারণ :
আলঝাইমার রোগের সঠিক কারণ এখনও অজানা। এর চিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে গবেষণায় দেখা গেছে
- মস্তিষ্কে প্লাক এবং জট : আলঝাইমার আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে প্লাক এবং জট থাকে। এই প্লাক এবং জট স্নায়ু কোষের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত করে বলে মনে করা হয়।
- অ্যামাইলয়েড এবং টাউ প্রোটিন : মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড এবং টাউ প্রোটিন তৈরি হতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, স্নায়ু কোষগুলি ধীরে ধীরে মারা যায়, যার ফলে মস্তিষ্কের অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হয়।
- স্নায়ুকোষের কার্যকরিতা হারানো : মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়নেরও বেশি স্নায়ু কোষ রয়েছে। এই কোষগুলো মারা যেতে থাকলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকা সম্ভব হয় না। ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, বিভ্রান্তি এবং আলঝাইমারের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়।
- স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ : মাইনার ধরনের স্ট্রোক যা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটায়, তা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এরফলেও আলঝাইমার্স দেখা দিতে পারে গবেষকরা অনুমান করছেন।
- পারকিনসন্স রোগের প্রভাব : এটা একটা নার্ভের রোগ। নার্ভের সঙ্গে মস্তিষ্কের রয়েছে গভীর যুগ। তাই নার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে এবং অ্যালঝাইমার্স হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
রোগের লক্ষণ :
ক) অ্যালঝাইমারের কিছু সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
- জানা কাজে অক্ষমতা : জানা কাজগুলিই এখন আর করতে পারছেন না।
- সহজ কাজে অক্ষমতা : জটিল তো বটেই, এমনকি সহজ কাজগুলিও করতে পারছেন না।
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস : স্মৃতিশক্তি আগের থেকে কমে গেছে।
- কথোপকথনে অসুবিধা : কথোপকথনের সময় কথা বলতে বা উত্তর দিতে অসুবিধা হচ্ছে।
- গুলিয়ে ফেলা : বিভ্রান্তি বা গুলিয়ে ফেলা, যা সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে।
- বুঝতে না পারা : অন্যরা কী বলছেন তা সহজে বুঝতে পারছেন না।
- মেজাজ পাল্টে যাওয়া : মেজাজ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া।
- আচরণের সমস্যা : আচার আচরণে সমস্যা।
- ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন :
- ভুল জায়গায় রাখা : বারবার জিনিসপত্র ভুল জায়গায় রাখা।
- বেশি সময় লাগা : কাজ করতে অসুবিধা এবং খুব বেশি সময় নেওয়া।
খ) হালকা থেকে মাঝারি পর্যায়ে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি স্পষ্ট হতে পারে:
- গুরুতর স্মৃতিশক্তি হ্রাস : যেমন ভুলে যাওয়া যে তারা কোথা থেকে এসেছে, টেলিফোন নম্বর, শৈশবের বিবরণ এবং আরও অনেক কিছু
- বিভ্রান্তি : আবহাওয়া, ঋতু, সপ্তাহ, দিন ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে বিভ্রান্তি।
- চিনতে না পারা : বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারকে চিনতে সমস্যা, এমনকি যাদের সাথে তারা বাস করে তাদেরও
- বারবার বলা : একই গল্প বারবার বলা
- দৈনন্দিন কাজে অক্ষমতা : স্নান, সাজসজ্জা, অথবা টয়লেট ব্যবহার করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
- ভয় বেড়ে যাবে : কেউ কেউ বিষণ্ণতা বা উদ্বেগেও ভুগতে পারেন
- ভিত্তিহীন ধারণা তৈরি : আশেপাশের মানুষদের সম্পর্কে ভিত্তিহীন ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করা
- হিসাবে সমস্যা : মৌলিক গণিত বুঝতে সমস্যা হচ্ছে
- ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন : চরম মেজাজের পরিবর্তন সহ
ঝুঁকি কমানোর উপায় :
অ্যালজাইমারসের ঝুঁকি কমানোর কিছু উপায় রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা তাঁদের গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তাঁদের মতে, শারীরিক কার্যকলাপ, সামাজিকতা বজায় রাখা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ জীবনযাত্রার অভ্যাসগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন বয়স্ক ব্যক্তি আলঝাইমার বা অন্য কোনও ডিমেনশিয়ায় মারা যান।
রোগীর নিজের করনীয় :
- মস্তিষ্ককে অ্যাক্টিভ রাখা : ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘ইউজ ইট অর লুজ ইট’। ষাট ঊর্ধ্য মানুষকে এই কথাটা মনে রেখে মাথাকে (মস্তিষ্ককে) কাজে লাগাতে হবে। পড়াশোনা করা, গান শোনা এবং সংসারের খুঁটিনাটি কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখা।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার : ঘুমের ব্যাঘাত এবং অপুষ্টি অ্যালঝাইমার্সকে বাড়িয়ে দেয়। তাই পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত জলপান, পর্যাপ্ত ঘুম এবং হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
- সামাজিক মেলামেশা : খোলা মনে সকলের সঙ্গে মেলামেশা করা, আনন্দদায়ক কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখা, পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, পরিবারের সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করা।
- সচেতন হওয়া : অবসর নেওয়ার আগেই বার্ধক্য জনিত রোগ (যেমন, অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়া ইত্যাদি)সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সেগুলোকে কন্ট্রোলে রাখার উপায় সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং সেগুলো মেনে চলার জন্য মানসিক প্রস্তুতিও অত্যন্ত জরুরী।
পরিবারের দায়িত্ব :
- রোগ সম্পর্কে সচেতনতা : আলজাইমার্স রোগের ওষুধ নেই বললেই চলে। কিন্তু একটু যত্ন, একটু সহমর্মিতা, একটু অকৃত্রিম ভালবাসা, সর্বোপরি তাকে একটু সময় দেওয়া গেলে এই রোগের গতি কমিয়ে ফেলা যায়।
- রোগীর প্রতি দায়বদ্ধতা : এটা জানার সাথে সাথে এটাও পরিবারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যদের জানা দরকার যে, এই মানুষটাই একদিন নিজের জীবন বাজি রেখে পরিবারের ছোটদের ঢাল হয়ে তাদের প্রতিরক্ষা দিয়ে গেছেন। এখন তারই প্রতিদান দেওয়ার সময়।
- একটু এগিয়ে ভাবা : এই প্রতিদান দেওয়ার দৃষ্টান্ত দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রবীনদের প্রতি না দেখালে, নিজেদের বার্ধক্যের সময় পরবর্তী প্রজন্ম এই দায়িত্ব পালনের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে শিখবে। তাই অ্যালঝাইমার্স রোগীর প্রতি যত্নবান হওয়ার কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।
অ্যালঝাইমার্স দিবস পালনের উদ্দেশ্য :
বিশ্ব অ্যালজাইমার্স দিবস প্রতি বছর ২১শে সেপ্টেম্বর পালিত হয়। এই দিনটি বিশ্বজুড়ে অ্যালজাইমার্স রোগ এবং অন্যান্য ধরনের ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য উৎসর্গীকৃত। এই দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো:১. সচেতনতা বৃদ্ধি:
অ্যালঝাইমার্স রোগ কী, এর লক্ষণ, কারণ এবং প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা। এটি শুধুমাত্র স্মৃতিশক্তি হ্রাসের একটি স্বাভাবিক অংশ নয়, বরং এটি একটি গুরুতর মস্তিষ্কের রোগ।
২. ভুল ধারণা দূরীকরণ:
ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমার্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সমাজের যে ভুল ধারণা বা কলঙ্ক রয়েছে, তা দূর করতে সহায়তা করা।
৩. সহায়তা ও সমর্থন:
আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিচর্যাকারীদের (caregivers) জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করা। কারণ এই রোগ শুধু রোগীকে নয়, তার পরিবারের সদস্যদেরও গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
৪. গবেষণার গুরুত্ব:
অ্যালজাইমার্স রোগের নিরাময় ও উন্নত চিকিৎসার জন্য গবেষণা এবং তহবিল সংগ্রহের গুরুত্ব তুলে ধরা।
১৯৯৪ সালে প্রথমবার ‘অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ ইন্টারন্যাশনাল’ (ADI)-এর ১০ম বার্ষিকী উপলক্ষে এই দিনটি পালিত হয়েছিল। ২০১২ সাল থেকে ২১শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স দিবস পালনের পাশাপাশি সেপ্টেম্বর মাসটিকে ‘বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স মাস’ হিসেবে পালন করা হয়। লক্ষ্য, যাতে সারা মাস জুড়ে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালানো যায়।
প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট থিম বা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। যেমন, কিছু থিম ছিল: ‘ডিমেনশিয়া জানুন, অ্যালঝাইমার্স জানুন’ এবং ‘ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার সময়, অ্যালঝাইমার্সের বিরুদ্ধে কাজ করার সময়’। এই দিনটিতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সেমিনার, সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান এবং তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অ্যালঝাইমার্স দিবসের ইতিহাস:
১৯০৬ সালে, জার্মান চিকিৎসক ডঃ অ্যালোইস আলঝাইমার (Dr. Alois Alzheimer) মস্তিষ্কের এমন এক অবস্থা বর্ণনা করেছিলেন, যা মানুষের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই অবস্থায় মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া ও বিচার করার ক্ষমতা কমে যায়। মানব মস্তিষ্কের এই অবস্থায়ই ‘অ্যালঝাইমার রোগ’ নামে পরিচিত। বলা বাহুল্য, ডঃ অ্যালোইস আলঝাইমার-এর নামেই এই রোগের নামকরণ করা হয়েছে।
ভারতে এই মুহূর্তে ৬০ লক্ষ মানুষ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন যার অন্যতম প্রধান কারণ অ্যালঝাইমার্স।
প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট থিম বা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। যেমন, কিছু থিম ছিল: ‘ডিমেনশিয়া জানুন, অ্যালঝাইমার্স জানুন’ এবং ‘ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার সময়, অ্যালঝাইমার্সের বিরুদ্ধে কাজ করার সময়’। এই দিনটিতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সেমিনার, সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান এবং তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন