জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ
জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ
![]() |
প্রথম বামফ্রন্ট সরকার গঠন |
Jyoti Basu takes oath as Chief Minister
প্রথম বামফ্রন্ট সরকার গঠন
১৯৭৭ সালের ২১ জুন। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন। আজকের দিনে জ্যোতি বসু ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত পশ্চিমবঙ্গ অঙ্গরাজ্যে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এটা ছিল তাঁর নেতৃত্বে গঠিত রাজ্যের প্রথম বামফ্রন্ট সরকার। তিনি টানা ২০০০ সালের ৫ই নভেম্বর পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন।পটভূমি:
১৯৭০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা, হিংসা ও অর্থনৈতিক সংকট চলছিল। ১৯৭২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এবং জরুরি অবস্থার সময়কালে রাজনৈতিক অস্থিরতা রাজ্যজুড়ে ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট (সিপিআই(এম), সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি প্রভৃতি দলের জোট) বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। এই জোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৩০টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয় ঘটে, মাত্র ২০টি আসনে জয় পেয়ে তারা বিরোধী দলে পরিণত হয়। এবং বামফ্রন্ট সরকারের আগমন এক নতুন আশার সঞ্চার করে।জ্যোতি বসু সরকারের লক্ষ্য:
জ্যোতি বসু ছিলেন সিপিআই(এম)-এর একজন প্রভাবশালী নেতা এবং বামফ্রন্টের স্বাভাবিক নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রধান লক্ষ্যগুলো ছিল:- ভূমি সংস্কার, ভূমিহীন মানুষের হাতে জমি
- পঞ্চায়েত ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ,
- শ্রমিক অধিকার রক্ষা এবং
- গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন।
- অবৈতনিক সর্বজনীন শিক্ষার অধিকার
দীর্ঘস্থায়ী শাসন:
- জ্যোতি বসু ২৩ বছর ধরে (১৯৭৭–২০০০) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা ভারতের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব রেকর্ড।
- ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্যজনিত কারণে তিনি পদত্যাগ করেন এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁর উত্তরসূরি হন।
- তাঁর শাসনামলে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, তবে বিরোধীরা মাঝে মাঝে বামফ্রন্টের ‘আধিপত্যবাদী’ নীতির সমালোচনা করত।
জ্যোতি বসু সরকারের কার্যক্রম :
জ্যোতি বসু একটানা ২০০০ সালের ৫ই নভেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন। তাঁর এই দীর্ঘ ২৩ বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বকাল ভারতীয় রাজনীতিতে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গ সাক্ষী হয় বহু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের:- ভূমি সংস্কার: বামফ্রন্ট সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল ভূমি সংস্কার। ‘অপারেশন বর্গা’র (ভূমিহীন কৃষকদের জমি বণ্টন) মাধ্যমে ভাগচাষীদের জমির অধিকার সুরক্ষিত করা হয় এবং উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এটি রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে।
- পঞ্চায়েত ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ: স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনকে জোরদার করার জন্য পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়মিত করা হয় এবং গ্রামীণ উন্নয়নে পঞ্চায়েতগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হয়।
- শিক্ষা: শিক্ষা ক্ষেত্রেও বামফ্রন্ট সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার এবং নিরক্ষরতা দূরীকরণের প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করা।
- শিল্প: যদিও বামফ্রন্ট সরকার কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নে বেশি জোর দিয়েছিল, তবে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে তাদের নীতিগুলি পরবর্তীকালে সমালোচিত হয়।
- শ্রমিক অধিকার রক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার-এর উপর জোর দেয়
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
২১ জুন, ১৯৭৭ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।✅ জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে পুনর্গঠিত করে, যা আজও স্মরণীয়।
✅ ১৯৭৭ সালের বামফ্রন্টের বিজয় ছিল ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের একটি মাইলফলক।
✅ জ্যোতি বসুকে ভারতের অন্যতম সফল রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়, যিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব (১৯৯৬ সালে) প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
✅ তাঁর সরকারের নীতিগুলি পরবর্তীতে কেরালা ও ত্রিপুরার মতো অন্যান্য বামশাসিত রাজ্যগুলিতেও প্রভাব ফেলে।
✅ জ্যোতি বসু একজন দক্ষ প্রশাসক এবং দূরদর্শী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর সময়ে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়ের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল।
✅ জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়কাল পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন