চে গেভারার জন্মদিন
চে গেভারার জন্মদিন :
![]() |
চে গেভারার জন্মদিন |
Che Guevara's Birthday
১৯২৮ সালের ১৪ই জুন। আর্জেন্টিনার রোসারিওতে জন্মগ্রহণ করেন চে গেভারা। তাঁর পুরো নাম আর্নেস্তো চে’ গেভারা (Ernesto ‘Che’ Guevara)। পৃথিবীর বহু মানুষ তাঁকে চে গুয়েভারা নামেও চেনে। তিনি পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে আছেন কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন বামপন্থী বিপ্লবের অন্যতম প্রধান রূপকার হিসাবে।
চে গেভারা (১৯২৮-১৯৬৭) ছিলেন একজন আর্জেন্টিনীয় মার্ক্সবাদী বিপ্লবী, চিকিৎসক, লেখক বুদ্ধিজীবী, কূটনীতিক। লাতিন আমেরিকার গেরিলা নেতা এবং সামরিক তাত্ত্বিক হিসাবে খ্যাতি বিশ্বজুড়ে।
‘চে’ গেভারা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
জন্ম ও শিক্ষা:
১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনার রোসারিওতে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে সামাজিক অবিচারের প্রতি এক মমত্ববোধ তৈরি হয়েছিল। তিনি বুয়েনস আইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন।মোটরসাইকেল ভ্রমণ ও নতুন চেতনা:
১৯৫০-এর দশকে দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে তাঁর মোটরসাইকেল ভ্রমণ তাঁর জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এই ভ্রমণে তিনি দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের দুর্দশা দেখে মর্মাহত হন এবং পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে মার্কসবাদের দিকে চালিত করে।‘চে’ উপাধি প্রাপ্তি:
১৯৫৩ সালে তিনি গুয়াতেমালাতে যান, যেখানে একটি প্রগতিশীল সরকার সামাজিক বিপ্লবের চেষ্টা করছিল। সেখানেই তিনি 'চে' উপাধিটি পান।ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে সাক্ষাৎ :
১৯৫৫ সালে তিনি মেক্সিকো সিটিতে ফিদেল কাস্ত্রো ও রাউল কাস্ত্রোর সাথে পরিচিত হন এবং তাঁদের ২৬শে জুলাই আন্দোলন-এ যোগ দেন।কিউবা বিপ্লবে অংশগ্রহণ :
১৯৫৬-৫৯ সালের কিউবান বিপ্লবে তিনি ফিদেল কাস্ত্রোর একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও গেরিলা নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফলে ফুলজেনসিও বাতিস্তার স্বৈরশাসনের পতন হয়।কিউবার অর্থমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী:
কিউবান বিপ্লবের সাফল্যের পর তিনি কিউবার জাতীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে কিউবার রাষ্ট্রদূত হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন এবং ভূমি সংস্কার ও শিল্পের জাতীয়করণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন।বিশ্বব্যাপী বিপ্লবের স্বপ্ন:
তিনি কেবল কিউবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, লাতিন আমেরিকার মুক্তির জন্য একটি আন্তঃমহাদেশীয় কৌশল প্রয়োজন। এই বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৬৫ সালে কিউবা ছেড়ে তিনি কঙ্গো এবং পরবর্তীতে বলিভিয়াসহ অন্যান্য দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।চে গেভারার মৃত্যু:
১৯৬৬ সালের নভেম্বরে তিনি ছদ্মবেশে বলিভিয়ায় প্রবেশ করেন এবং সেখানে গেরিলা বাহিনী গঠন করে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। অবশেষে, ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর বলিভিয়ার সামরিক বাহিনীর হাতে তিনি আহত অবস্থায় ধরা পড়েন এবং পরদিন ৯ অক্টোবর বলিভিয়ার লা হিগুয়েরা গ্রামে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।চে গেভারার প্রভাব:
চে গেভারা তাঁর মৃত্যুর পর বিশ্বজুড়ে সমাজতন্ত্র, বিপ্লব, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত উক্তি: “hasta la victoria siempre” (জয় পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাও)। তাঁর শৈল্পিক মুখচিত্রটি একটি সর্বজনীন প্রতিক্রিয়ামূলক প্রতীক এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিশ্বপ্রতীক হিসেবে পরিচিত। তিনি গেরিলা যুদ্ধের উপর একটি প্রভাবশালী ম্যানুয়েল রচনা করেছিলেন এবং তাঁর তরুণ বয়সে দক্ষিণ আমেরিকায় মোটরসাইকেলে ভ্রমণের স্মৃতিকথা 'দ্য মোটরসাইকেল ডায়েরিজ' (The Motorcycle Diaries) অত্যন্ত জনপ্রিয়। চে গেভারা কেবল একজন বিপ্লবী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক, লেখক এবং সামরিক তাত্ত্বিক, যিনি শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।চে গেভারার জীবনাদর্শ ও সংগ্রাম বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতাকামী আন্দোলনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন