বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসু জন্মদিন
বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসু জন্মদিন
Revolutionary Satyendranath Bose's birthday
১৮৮২ সালের ৩০ জুলাই। বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মদিন। সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন অগ্নিযুগের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন অন্যতম বিপ্লবী ব্যক্তিত্ব। তিনি আলিপুর বোমা মামলার রাজসাক্ষী নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী বা নরেন গোঁসাইকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। এই অপরাধে ১৯০৮ সালে ২৩ ( মতান্তরে ২২) নভেম্বর, কোলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে তাঁর ফাঁসি দেওয়া হয় ।
জন্ম ও শৈশব :
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় ১৮৮২ সালে ৩০ শে জুলাই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা অভয়া চরণ বসু মেদিনীপুর কলেজের একজন অধ্যাপক ছিলেন। ১৮৫০ সাল থেকে তিনি মেদিনীপুরে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন । অভয়া চরণের পাঁচ পুত্রের কথা জানা যায়। এদের মধ্যে জ্ঞানেন্দ্র নাথ, সত্যেন্দ্র নাথ, ভূপেন্দ্র নাথ, সুবোধ কুমারের নাম জানা যায়। অন্য পুত্রের নাম জানা যায়নি। তাঁর তিন জন কন্যা সন্তান ছিলেন বলেও আমরা জানতে পারি।
সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন শ্রী অরবিন্দের মামা। যদিও তিনি প্রায় দশ বছরের ছোটো ছিলেন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর পরিবারটি মূলত অবিভক্ত ২৪ পরগনার জেলার বোড়ালের অধিবাসী। ঋষি রাজ নারায়ণ বসুর বংশধর। রাজ নারায়ণ বসুর পিতা বাবু নন্দ কিশোর বসু ছিলেন রাজা রামমোহন রায়ের অনুসারী। তাঁর পরিবারের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। বাবু নন্দ কিশোরের তিন পুত্র ছিল, যার মধ্যে বড় ঋষি রাজ নারায়ণ ভীষণ ধর্মভীরু ও মাটির মানুষ হিসাবে এলাকায় খ্যাতি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি আদি ব্রাহ্মসমাজের বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। ছিলেন তৎকালীন সময়ে হিন্দু কলেজের সিনিয়র স্কলার। তাঁর দুই ছোট ভাই ছিলেন মদন মোহন এবং অভয়া চরণ । ১৮৫০ সাল নাগাদ বাবু রাজ নারায়ণ তাঁর দুই ছোট ভাইয়ের সাথে পৈতৃক গ্রাম বোড়াল ছেড়ে মেদিনীপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
শিক্ষা
সত্যেন সফলভাবে প্রবেশিকা এবং এফ. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় । তারপর সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এ. পড়বার জন্যে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কলেজ ছেড়ে মেদিনাপুর কালেক্টরেটে প্রায় এক বছর কাজ করেছিলেন ।
বিপ্লবী জীবন :
সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন অনুশীলন সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য। তাঁর অগ্রজ জ্ঞানেন্দ্রনাথ এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে ১৯০২ সালে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিলো। সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর সহকারী । ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তিনি ‘ছাত্রভাণ্ডার’ গড়ে তোলেন। এখানে তাঁত, ব্যায়ামচর্চা ইত্যাদির আড়ালে বিপ্লবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু তাঁর সাহায্যেই বিপ্লবী দলে নাম লেখান। ক্ষুদিরাম তাঁর নির্দেশেই ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করেতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
এক সময় বন্দুক রাখার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। যদিও যে বন্দুকটি তাঁর কাছে ছিল, সেটার লাইসেন্স ছিল তাঁর ভাইয়ের নামে। ফলে পুলিশ রিপোর্ট অনুসারে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং দুই মাসের জন্য সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট :
উল্লেখ্য, ক্ষুদিরাম বোস ও প্রফুল্ল চাকী মুজফফরপুর বোমা হামলার মাত্র দু'দিন পরে ৩০ এপ্রিল ১৯০৮ কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশ ২ মে ১৯০৮ সালে কলকাতার ৩২ মুরারি পুকুর রোড চত্বরে অভিযান চালায় এবং একটি বোমা-কারখানার সন্ধান পায়। পুলিশ হানা দিয়ে সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে গোলাবারুদ, বোমা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে। কানাইলাল দত্তক সহ এই সময় ৩৩ জন বিপ্লবীকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে।
এরপর সমগ্র বাংলা এবং বিহার জুড়ে পুলিশি অভিযান শুরু করে। বিপ্লবীদের টার্গেট করে তাঁদের সমস্ত কিছু বাজেয়াপ্ত করা শুরু হয়। অরবিন্দ ঘোষ, বরেন্দ্র কুমার ঘোষ, উল্লাসকার দত্ত, ইন্দু ভূষণ রায় সহ আরও অনেককে এই সময় গ্রেপ্তার করা হয়। এই মামলার বিচারে নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী রাজসাক্ষী হন।
গ্রেফতার ও ফাঁসির ঘোষণা :
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী সত্যেন বসু আলিপুর বোমা মামলার রাজসাক্ষী নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী বা নরেন গোঁসাইকে গুলি করে হত্যা করে। এই অপরাধের বিচার শেষে ২৩ নভেম্বর, ১৯০৮ সালে সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে প্রেসিডেন্সি জেলে ফাঁসি দেওয়া হয় ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন