পৃথিবীর প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম
পৃথিবীর প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম :
World's first test tube baby born
১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই। পৃথিবীর প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয়। লুইস জয় ব্রাউন নামের এই মানুষ জন্মগ্রহণ করে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার শহরে। এই চিকিৎসা পদ্ধতির স্রষ্টা ছিলেন রবার্ট এডওয়ার্ডস, প্যাট্রিক স্টেপটো ও জিন পুর্ডি।
টেস্টটিউব বেবির জন্মের ইতিহাস:
শুরুর দিকের গবেষণা (১৯৩০-১৯৫০-এর দশক):
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) বা টেস্টটিউব বেবির ধারণাটি হঠাৎ করে জন্ম নেয়নি। অনেক বিজ্ঞানী বহু দশক ধরে এর পেছনে কাজ করেছেন। ১৯৩০-এর দশকে প্রাণীদের মধ্যে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।
মানুষের উপর প্রথম প্রচেষ্টা (১৯৭০-এর দশক):
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট এডওয়ার্ডস এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিক স্টেপটো মানবদেহে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল সেইসব দম্পতিদের সাহায্য করা, যারা প্রাকৃতিকভাবে সন্তান ধারণে অক্ষম।
প্রথম সফল গর্ভধারণ ও জন্ম (১৯৭৮):
দীর্ঘদিনের গবেষণা ও অসংখ্য ব্যর্থতার পর অবশেষে ১৯৭৭ সালের নভেম্বরে লেসলি ব্রাউন নামের এক মহিলার ডিম্বাণু শরীরের বাইরে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত করা হয়। এই নিষিক্ত ভ্রূণটি পরে লেসলির জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। এবং সফলভাবে গর্ভাবস্থা সম্পন্ন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালের ২৫শে জুলাই সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে জন্ম নেয় লুইস জয় ব্রাউন, যিনি বিশ্বের প্রথম ‘টেস্টটিউব বেবি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য রবার্ট এডওয়ার্ডস ২০১০ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
ভারতের প্রথম টেস্টটিউব বেবি:
লুইস ব্রাউনের জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই, ১৯৭৮ সালের ৩রা অক্টোবর, ভারতের প্রথম টেস্টটিউব বেবি কানুপ্রিয়া আগরওয়াল (দুর্গা) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। এই কৃতিত্ব ছিল বাঙালি বিজ্ঞানী ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের।
তবে দুঃখজনকভাবে, তাঁর কাজ প্রাথমিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি এবং তাঁকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
আধুনিক আইভিএফ (IVF):
প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্মের পর থেকে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) পদ্ধতিটি অনেক উন্নত হয়েছে। বর্তমানে এটি বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় একটি অত্যন্ত সফল এবং স্বীকৃত পদ্ধতি। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ শিশু আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে, যা নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য আশার আলো নিয়ে এসেছে।
টেস্টটিউব বেবির জন্ম একটি দীর্ঘ এবং কঠিন গবেষণার ফল, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষের জীবনে মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের আনন্দ এনে দিয়েছে।
------------xx-----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন