কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের উদ্বোধন

কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের উদ্বোধন :

Inauguration of Kolkata Doordarshan Kendra

১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়। কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়। এবং কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্লা। ১৯৭৫ সালের ৯ই আগস্ট তারিখে কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের পথচলা শুরু হয়েছিল। সেই সময় কলকাতার মানুষ প্রথম টেলিভিশনের সম্প্রচার দেখার সুযোগ পায়।

শুরুর দিকে, সম্প্রচার শুধু কলকাতার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং প্রোগ্রামগুলো ছিল সাদা-কালো। পরে ১৯৮৬ সালের ১লা জুলাই কলকাতার গল্ফ গ্রিনে এর স্থায়ী ভবনের উদ্বোধন হয়।

প্রতিষ্ঠা ও প্রথম সম্প্রচার (৯ই আগস্ট, ১৯৭৫)

১৯৭৫ সালের ৯ই আগস্ট, কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। সেই দিনটি ছিল বাংলার টেলিভিশন ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। প্রথম সম্প্রচারের সময় একজন মহিলা ঘোষিকার কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল, “নমস্কার, আজ থেকে কলকাতা টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হল”।
প্রতিষ্ঠার সময় এটি ছিল ভারতের একমাত্র সরকারি টেলিভিশন সংস্থা দূরদর্শনের একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র। যদিও ভারতে দূরদর্শন যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৫৯ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর দিল্লিতে, কলকাতার কেন্দ্রটি ছিল তৃতীয় বাংলা ভাষার টেলিভিশন স্টেশন (এর আগে ঢাকায়নাটোরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্টেশন চালু হয়েছিল)।

প্রাথমিক পর্যায় ও পরিকাঠামো

১) স্টুডিও: 

শুরুর দিকে কলকাতার দূরদর্শন কেন্দ্রের কোনো নিজস্ব স্থায়ী স্টুডিও ছিল না। টালিগঞ্জের রাধা ফিল্ম স্টুডিওতে একটি ছোট ঘর থেকেই সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অনুষ্ঠান রেকর্ডিংয়ের জন্য একটি ওবি (আউটসাইড ব্রডকাস্ট) ভ্যান ব্যবহার করা হতো।

২) সম্প্রচারের ধরন: 

প্রথমদিকে সম্প্রচার কেবল কলকাতার ৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সীমিত ছিল এবং এর সময়ও ছিল স্বল্প।

৩) আকাশবাণী থেকে বিচ্ছিন্নকরণ: 

১৯৭৬ সালে দূরদর্শনকে আকাশবাণী (অল ইন্ডিয়া রেডিও) থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিষেবা হিসাবে গড়ে তোলা হয়। এর পর দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর জন্য পৃথক অধিকর্তা নিযুক্ত হন।

ক্রমবিকাশ এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক

ক) রঙিন সম্প্রচার:

১৯৮২ সালের ১৫ই আগস্ট সারা দেশে রঙিন সম্প্রচার শুরু হয়। তবে কলকাতায় রঙিন সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৮৩ সালের ৬ই জুন।

খ) স্থায়ী ঠিকানা:

১৯৮৬ সালের ১লা জুলাই কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্র তার বর্তমান স্থায়ী ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়। এই নতুন ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী

গ) নাম পরিবর্তন: 

১৯৯২ সালের ২০ই আগস্ট, কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ডিডি বাংলা (DD Bangla)।

ঘ) ডিজিটাল ও স্যাটেলাইট সম্প্রচার: 

১৯৯২ সালের ২০ই আগস্ট দূরদর্শন কলকাতা আঞ্চলিক ভাষার স্যাটেলাইট পরিষেবা শুরু করে। এর ফলে ভারতের বিভিন্ন অংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশেও ডিডি বাংলার অনুষ্ঠান দেখা সম্ভব হয়। ২০০১ সালে স্টুডিওর ডিজিটাল রূপান্তর করা হয় এবং ২০০৪ সালে ডিজিটাল স্যাটেলাইট আপলিংকিং চালু হয়।

সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্র বাংলার সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং শিক্ষামূলক জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বহু বিখ্যাত চলচ্চিত্র, নাটক, তথ্যচিত্র এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান এখানে প্রযোজিত হয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় তৈরি সুকুমার রায়কে নিয়ে একটি রঙিন তথ্যচিত্রও এখান থেকে সম্প্রচারিত হয়েছিল।

বর্তমানে, এটি প্রসার ভারতীর অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসাবে কাজ করে এবং বাংলা, হিন্দি, উর্দু, নেপালি এবং সাঁওতালি ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই কেন্দ্রটি বাঙালির জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
--------xx-------

কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের উদ্বোধন: একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক

উদ্বোধনের তারিখ ও গুরুত্ব:

কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্র ৮ আগস্ট ১৯৭৫-এ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এটি ছিল ভারতের দ্বিতীয় টেলিভিশন কেন্দ্র (প্রথমটি দিল্লি, ১৯৫৯)। উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। কেন্দ্রটি পশ্চিমবঙ্গপূর্বাঞ্চলে টেলিভিশন সম্প্রচারের যুগের সূচনা করে।

পটভূমি ও উদ্দেশ্য:

১) জাতীয় সম্প্রচার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ: 
দিল্লির পর কলকাতাকে বেছে নেওয়া হয় পূর্ব ভারতের বিপুল জনসংখ্যাকে সংযোগ দিতে।
২) শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রচার:
দূরদর্শনের ‘শিক্ষা, তথ্য ও বিনোদন’ নীতির আলোকে বাংলার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা।
৩) প্রযুক্তিগত উন্নয়ন:
৭০-এর দশকে টেলিভিশন প্রযুক্তির বিস্তারে এই কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য:

1. সীমিত সম্প্রচার: 
শুরুতে সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন (বুধ, শুক্র, রবি) অনুষ্ঠান প্রচারিত হত, দিনে ৩-৪ ঘণ্টা।
2. কভারেজ: 
কলকাতা ও আশেপাশের ৪০ কিমি এলাকা জুড়ে সিগনাল পৌঁছাত।
3. বিষয়বস্তু: 
শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, সংবাদ, লোকশিল্প, নাটক ও সরকারি প্রচারণামূলক বিষয়বস্তু প্রাধান্য পেত।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

- উদ্বোধনের সময়টি ছিল জরুরি অবস্থা (১৯৭৫-৭৭) চলাকাল। দূরদর্শনকে সরকারি নীতির প্রচারে ব্যবহারের সমালোচনাও ছিল।
- বাংলা ভাষার প্রসার: 
স্থানীয় ভাষায় অনুষ্ঠান (বিশেষত ১৯৮০-র দশকে) বাংলা সংস্কৃতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে।

উল্লেখযোগ্য অর্জন:

- রঙিন টেলিভিশনের সূচনা: 
১৯৮৪ সালে গোল্ডেন বেঙ্গল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলকাতায় প্রথম রঙিন সম্প্রচার শুরু হয়।
- আইকনিক অনুষ্ঠান:
- জলজ্যান্ত (বাংলা নাটক),
- রবি ঠাকুরের গল্প (রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য অবলম্বনে),
- শিশুদের অনুষ্ঠান টিং টং
- খেলাধুলার সম্প্রচার: ৮০-৯০ দশকে ফুটবল ম্যাচ ও ক্রিকেট সরাসরি দেখানোর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি।

স্থায়ী প্রভাব:

মিডিয়া বিপ্লব:  কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে টেলিভিশনের প্রসারে ভূমিকা রাখে।
সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ: বাংলা নাটক, সঙ্গীত ও লোকশিল্পকে জাতীয় প্ল্যাটফর্ম দেয়।
পরবর্তী প্রজন্মের ভিত্তি: পরবর্তীতে স্টার জলসা, জি বাংলা-র মতো বেসরকারি চ্যানেলের উত্থানে দূরদর্শনের অবদান অনস্বীকার্য।

বর্তমান অবস্থা:

আজও কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্র সক্রিয়, তবে বেসরকারি চ্যানেলের চাপে এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। এটি পূর্ব ভারতের টেলিভিশন ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে সমাদৃত।

উদ্বোধন দিবসটি (৮ আগস্ট) কলকাতার মিডিয়া ইতিহাসে একটি স্মরণীয় তারিখ, যা আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় শহরের ভূমিকাকে চিহ্নিত করে।

মন্তব্যসমূহ

🔰 ব্যক্তি অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন : 🔍

আরও দেখান

🔰 বিষয় অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন :🔍

আরও দেখান

🔰 তথ্য তালাশ : জনপ্রিয় ব্যক্তি ও বিষয়গুলো দেখুন:

উসেইন বোল্ট, ১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ড

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মদিন

শুভাংশু শুক্লার মহাকাশ পাড়ি

ভারতের জাতীয় প্রতীকের নকশাকার

প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ার-এর জন্মদিন

জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ

আন্তর্জাতিক সাইকেল দিবস

বিরসা মুন্ডার মৃত্যুদিন

মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজীর রাজ্যভিষেক

তথ্য তালাশ : অনলাইন সংকলন

আলী হোসেন, লেখক,
তথ্য তালাশ
সুপ্রিয় পাঠক,

তথ্য তালাশ-এর অনলাইন সংকলনে আপনাকে স্বাগত। 

প্রতিদিন, প্রতি নিয়ত বিশ্বজুড়ে ঘটে চলেছে নানান ঘটনা। কিছু বিখ্যাত, কিছু অখ্যাত, আবার কিছু কুখ্যাতও। এই সব হরেক ঘটনার মধ্যে থাকে এমন কিছু ঘটনা, যা মানুষ মনে রাখতে চায়, চায় স্মরণ করতে।

তথ্য তালাশ সেই লক্ষ্য নিয়েই তৈরি। যেহেতু এটি ডিজিটাল ফরম্যাটে তৈরি, তাই যখনই প্রয়োজন পড়বে, আপনার হাতের মোবাইলে হাত রাখলেই আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মত সামনে হাজির হবে তথ্য তালাশ

আপনি কি পড়তে চান এই সংকলনটি! ক্লিক করুন এখানে