অক্সিজেন আবিষ্কার
অক্সিজেন আবিষ্কার :
![]() |
অক্সিজেন আবিষ্কার |
The discovery of oxygen
১৭৭৪ সালের ১ আগস্ট। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জোসেফ প্রিস্টলি অক্সিজেন আবিষ্কার করেন। এছাড়া তিনি কার্বন মনোক্সাইড, অ্যামোনিয়া, সালফার ডাই অক্সাইড সহ আরও নটি গ্যাস আবিষ্কার করেছিলেন।কার্ল উইলহেম শিলি (Carl Wilhelm Scheele) :
সুইডিশ রসায়নবিদ কার্ল উইলহেম শিলি ১৭৭২ সালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অক্সিজেন গ্যাস তৈরি করেছিলেন। তিনি পটাশিয়াম নাইট্রেট, মারকিউরিক অক্সাইড এবং অন্যান্য পদার্থের সাথে অ্যাসিড মিশিয়ে এই গ্যাস সংগ্রহ করেন। তিনি পটাশিয়াম নাইট্রেট, ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড বা মারকিউরিক অক্সাইড গরম করে এই গ্যাস আলাদা করেন এবং এর দহন-সহায়ক ধর্ম চিহ্নিত করেন। তিনি এই গ্যাসের নাম দিয়েছিলেন ‘ফায়ার এয়ার’ বা ‘আগুন বাতাস’, কারণ তিনি দেখেছিলেন এই গ্যাস দহনে সাহায্য করে।কিন্তু তাঁর আবিষ্কারের ফল প্রকাশ করতে দেরি হয়, তাই তিনি অক্সিজেনের আবিষ্কারক হিসেবে তেমন স্বীকৃতি পাননি। তাঁর বইটি (Chemical Treatise on Air and Fire) প্রকাশিত হয়েছিল ১৭৭৭ সালে।
জোসেফ প্রিস্টলি (Joseph Priestley) :
ব্রিটিশ রসায়নবিদ জোসেফ প্রিস্টলি ১লা আগস্ট, ১৭৭৪ সালে একটি ভিন্ন উপায়ে একই গ্যাস আবিষ্কার করেন। তিনি একটি বড় কাচের লেন্স ব্যবহার করে সূর্যের আলো কেন্দ্রীভূত করে মারকিউরিক অক্সাইডের উপর ফেলেন। এতে একটি বর্ণহীন গ্যাস উৎপন্ন হয়। প্রিস্টলি দেখেন, এই গ্যাসে একটি মোমবাতি সাধারণ বাতাসের চেয়ে অনেক উজ্জ্বলভাবে জ্বলে এবং একটি ইঁদুর সাধারণ বাতাসের চেয়ে এই গ্যাসে অনেক বেশি সময় বেঁচে থাকে। তিনি এই গ্যাসের নাম দিয়েছিলেন ‘ডিফ্লজিস্টিকেটেড এয়ার’ (dephlogisticated air)। কারণ তখন প্রচলিত ‘ফ্লজিস্টন তত্ত্ব’ অনুযায়ী তিনি ধারণা করেছিলেন এটি ‘ফ্লজিস্টন-মুক্ত’ বাতাস।তিনি তাঁর আবিষ্কার ১৭৭৫ সালে প্রকাশ করেন। যেহেতু তাঁর কাজ আগে প্রকাশিত হয়েছিল, তাই তাঁকে অক্সিজেনের আবিষ্কারক হিসেবে বেশি স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
সুতরাং, শিলি এবং প্রিস্টলি স্বাধীনভাবে অক্সিজেন আবিষ্কার করলেও, লাভোয়াজিয়ে এই গ্যাসের সঠিক প্রকৃতি ব্যাখ্যা করেন এবং এর নামকরণ করেন, যা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল।
অঁতোয়ান লাভোয়াজিয়ে (Antoine Lavoisier) :
ফরাসি রসায়নবিদ অঁতোয়ান লাভোয়াজিয়ে প্রিস্টলির আবিষ্কার সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। তিনি এই গ্যাস নিয়ে আরও গবেষণা করেন এবং এর আসল প্রকৃতি বুঝতে পারেন। তিনি প্রমাণ করেন যে এটি একটি মৌলিক গ্যাস, কোনো যৌগ নয় এবং বাতাসের সংমিশ্রণে এর ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন (বাতাস ≈ নাইট্রোজেন + অক্সিজেন)। ১৭৭৭ সালে তিনি এই গ্যাসের নাম দেন অক্সিজেন।গ্রিক শব্দ ‘oxys’ (অ্যাসিড) এবং ‘genes’ (উৎপাদনকারী) থেকে এই নামটি আসে। কারণ, তিনি ভুলবশত মনে করেছিলেন যে সব অ্যাসিডের মধ্যে অক্সিজেন থাকে। লাভোয়াজিয়ে তাঁর কাজের মাধ্যমে দহন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের পেছনে অক্সিজেনের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন (যা ‘ল্যাভয়সিয়ের দহন তত্ত্ব’ নামে পরিচিত) এবং ‘ফ্লোজিস্টন’ (phlogiston) তত্ত্বকে বাতিল করে আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেন।
অবদানের স্বীকৃতি বিতর্ক:
শিলে প্রথম আবিষ্কার করলেও দেরিতে প্রকাশের কারণে স্বীকৃতি পাননি। প্রিস্টলির কাজ আগে প্রকাশিত হলেও তিনি অক্সিজেনের প্রকৃতি বুঝতে ব্যর্থ হন। ল্যাভয়সিয়েরই প্রথম এর রাসায়নিক গুরুত্ব ও নামকরণ করেন, তাই তাঁকেই মূল কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
সুতরাং, শিলি এবং প্রিস্টলি স্বাধীনভাবে অক্সিজেন আবিষ্কার করলেও, লাভোয়াজিয়ে এই গ্যাসের সঠিক প্রকৃতি ব্যাখ্যা করেন এবং এর নামকরণ করেন, যা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল।
সংক্ষিপ্ত কালপঞ্জি:
| বছর | ঘটনা |
|১৭৭২| শিলে পরীক্ষামূলকভাবে অক্সিজেন তৈরি করেন (প্রকাশ: ১৭৭৭) |
|১৭৭৪| প্রিস্টলি মারকিউরিক অক্সাইড থেকে অক্সিজেন আলাদা করেন |
|১৭৭৫| ল্যাভয়সিয়ের প্রিস্টলির পরীক্ষা যাচাই করেন |
|১৭৭৯| ল্যাভয়সিয়ের ‘অক্সিজেন’ নামকরণ করেন |
|১৭৮৯| ল্যাভয়সিয়েরের ‘Traité Élémentaire de Chimie’ গ্রন্থে অক্সিজেনের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় |
গুরুত্ব:
✅ অক্সিজেনের আবিষ্কার রসায়নবিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটায়: ফ্লজিস্টন তত্ত্বের বিলুপ্তি, দহন ও শ্বসনের সঠিক ব্যাখ্যা,✅ আধুনিক রাসায়নিক নামকরণ পদ্ধতির সূচনা করে।
✅ এটি জীববিজ্ঞান, চিকিৎসা ও শিল্পক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনে (যেমন: অক্সিজেন থেরাপি, শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়া)।
✅ এই আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞান বস্তুর রূপান্তর ও শক্তির প্রবাহ বুঝতে পেরে আধুনিক যুগে প্রবেশ করে।
✅ এটি জীববিজ্ঞান, চিকিৎসা ও শিল্পক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনে (যেমন: অক্সিজেন থেরাপি, শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়া)।
✅ এই আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞান বস্তুর রূপান্তর ও শক্তির প্রবাহ বুঝতে পেরে আধুনিক যুগে প্রবেশ করে।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন