অসমের বাংলা ভাষা আন্দোলন
অসমের বাংলা ভাষা আন্দোলন :
Bengali Language Movement in Assam
১৯৬১ সালের ১৯শে মে। ভারতের অসম রাজ্যের শিলচর স্টেশনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১১ জন বাঙালি। বাংলাকে অস্বীকার করে অহমিয়াকেই একমাত্র সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষণা করায় এখানকার বাঙালিরা অসম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।আসামের ভাষা আন্দোলন (১৯৬০-৬১)
কারণ:
১৯৬০ সালে আসাম সরকার অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে, যা বাংলাভাষী মানুষদের (বরাক উপত্যকা সহ) ক্ষুব্ধ করে। এর প্রতিবাদে বাংলাভাষী ছাত্র-জনতা আন্দোলন গড়ে তোলে, বিশেষ করে শিলচর, করিমগঞ্জ ও কাছাড় অঞ্চলে।
এর মূল যে সমস্ত কারণ ছিল —
১) অসমীয়াকে একমাত্র সরকারি ভাষা করার প্রচেষ্টা: রাজ্য সরকার ১৯৬০ সালে অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি বিল আনে। এর ফলে বাংলাভাষী অঞ্চলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
২) ভাষাগত বৈষম্য: বাংলাভাষী জনগণ আশঙ্কা করছিলেন যে সরকারি ভাষা অসমীয়া হলে শিক্ষা, চাকরি এবং অন্যান্য সুযোগের ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হবেন।
৩) সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা: বাংলাভাষীরা আসামের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ছিলেন এবং তারা তাদের ভাষাগত অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন।
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:
- ১৯ মে, ১৯৬১ : শিলচর রেলস্টেশনে পুলিশের গুলিতে ১১ জন বাঙালি শহিদ হন।
- এই দিনটি ‘বাংলা ভাষা শহিদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
- আন্দোলনের চাপে সরকার ‘বাংলাকে সহ-সরকারি ভাষা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
কয়েকজন শহীদ:
১৯ শে মে, ১৯৬১ সালে শিলচর রেলস্টেশনে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন আন্দোলনকারী শহীদ হন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখযোগ্য:
- কমলা ভট্টাচার্য
- শচীন্দ্র পাল
- তরুণী দেবনাথ
- সুনীল সরকার
- কানাইলাল নিয়োগী
- চণ্ডীচরণ সূত্রধর
- হিতেশ বিশ্বাস
- কুমুদ দাস
- দিবেন্দ্র দাস
গুরুত্ব:
- বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা : বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায় করা সম্ভব হয়।
- সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা: আসামের বাংলাভাষীদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।
- ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা: এই আন্দোলন বাংলাভাষী মানুষের ভাষাগত অধিকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই ছিল।
- সহিংসতার প্রতিবাদ: শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সত্ত্বেও পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীদের মৃত্যু তৎকালীন সরকারের দমনমূলক নীতিকে তুলে ধরে।
- জাতীয় সংহতির প্রশ্ন: এই ঘটনা আসামের ভাষিক সংখ্যালঘুদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং জাতীয় সংহতির প্রশ্নে একটি বড় ধাক্কা লাগে।
- পরবর্তী আন্দোলনের প্রেরণা: এই আন্দোলনের আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে অন্যান্য ভাষিক অধিকারের আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছে।
এই আন্দোলন ‘ভাষা অধিকারের লড়াইয়ের’ একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন