ইরান ইসরাইল যুদ্ধ শুরু
ইরান ইসরাইল যুদ্ধ শুরু
Iran-Israel war begins
২০২৫ সালের ১৩ জুন। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ শুরু করে একতরফাভাবে ইজরাইল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নাম দিয়ে ইজরাইলি ডিফেন্স ফোর্স এবং তাদের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ ইরানের রাজধানী তেহরান সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও অসামরিক ক্ষেত্রে আক্রমণ শুরু করে।ইজরায়েলের এই আকস্মিক হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানী এবং বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ মেলেটারি কর্মকর্তা মারা যান। সেই সঙ্গে মারা যান অনেক সাধারণ ইরানি নাগরিক।
ইরান ইসরাইল যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ :
যুদ্ধের কারণ, ইসরাইলের মতামত :
এই যুদ্ধের কারণ হিসেবে ইজরাইলের তরফে বলা হয়
১) ইরান পরমাণু বোমা তৈরীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। তাকে আটকাতে না পারলে ইসরাইল এবং পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
২) হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে যে সংঘাত চলছে তাতে মদদ যোগাচ্ছে ইরান। তাই ইসরাইলের স্বার্থে ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো তাদের কাছে অত্যন্ত জরুরি।
৩) জাতিসংঘের নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি ইরানের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র গুলি পরিদর্শনে বাঁধার সৃষ্টি করছে। সুতরাং এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় ইরান পারমানবিক অস্ত্র তৈরীর দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।
যুদ্ধের কারণ, ইরানের মতামত :
ইরানের মতে, এই যুদ্ধ ইসরাইল ইরানের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। তাদের মতে,
১) বিনা প্ররোচনায় ১৩ ই জুন ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রে আক্রমণ করে
২) গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের নেতৃত্বে ইরানের অভ্যন্তরে গুপ্ত হত্যা চালায়। এই সময় ইরানের কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ নেতাকে ইসরাইল হত্যা করে।
ইরান ইসরাইল যুদ্ধের পরোক্ষ কারণ :
প্রত্যক্ষভাবে এই দুটি অভিযোগ থাকলেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :
১) গুপ্ত হত্যা :
১৯৭৯ সালে ইরানে ইমাম খামেনির নেতৃত্বে ইসলামিক বিপ্লবের পর ইজরাইলের সঙ্গে ইরান কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এবং ইসরাইলকে প্যালেস্টাইনে অবৈধ অভিবাসী বলে ঘোষণা করে। এরপর থেকে, উভয় দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এরই প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল একের পর এক গুপ্তহত্যা চালিয়ে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সেনাকর্তা এবং বিজ্ঞানীদের হত্যা করে।
২) ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি গণহত্যা :
ইরান ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে। অন্যদিকে, ইরানের অভিযোগ ইজরায়েল প্যালেস্টাইন থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই উদ্দেশ্যে ইসরাইল নির্বিচারে গণহত্যা চালায় বলে ইরান অভিযোগ করে।
৩) ‘গ্রেটার ইজরায়েল’ প্রকল্প :
ইরানের মতে, ইসরাইল আসলে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সমগ্র প্যালেস্তাইন দখল করতে চায়। এবং একসময় পার্শ্ববর্তী এলাকা দখল করে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি সম্রাজ্য (গ্রেটার ইজরায়েল) গড়ে তুলতে চায়।
৪) গোপনে পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ করা :
ইহুদি সাম্রাজ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইজরাইল ইরানকে প্রধান বাধা হিসেবে গণ্য করে। তাই তাকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে নতুন নতুন বিধ্বংসী অস্ত্র সহ পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে।
৫) ইরানের পরমাণু প্রকল্পের বিরোধিতা করা :
ইরানের অভিযোগ, নিজে পরমাণু কার্যক্রম চালু রাখলেও ইরানকে পরমাণু কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে। এটাতে ইরান ইসরাইলের দাদাগিরি বলে মনে করে।
৫) আমেরিকার প্রক্সি হিসেবে কাজ করা :
ইরান মনে করে, আমেরিকা একটি ভয়ংকর সাম্রাজ্যবাদী দেশ। মধ্যপ্রাচ্যে নানান কৌশলে এবং কখনও কখনও বল প্রয়োগ করে সেখানকার খনিজ সম্পদের উপর অবৈধ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। ইসরাইল আমেরিকার এই কাজের প্রক্সি হিসেবে কাজ করে।
৬) প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভূমি দখল :
ইরানের অভিযোগ, ইসরাইল রাষ্ট্রের উৎপত্তির পর থেকেই ইসরাইল একটু একটু করে তার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ভূমি দখল করে আসছে। এই কাজ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।
ইসরাইলের উপরোক্ত কার্যাবলী এবং মনোভাব, ইরান মনে করে, অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে তার নিজেরও নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ। মূলত এই কারণে ইরান ইসরাইলের প্রতি ক্ষুব্ধ। তাই, ১৩ই জুন ইসরাইল ইরান আক্রমণ করলে ইরান সর্বশক্তি নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে ইরান ইসরাইল যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। শুরু করে অপারেশন ট্রু প্রমিস ফ্রি। ১২ দিন ব্যাপক সংঘর্ষের পর ২৫ জুন আমেরিকার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন