বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস

বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস

World Day Against Child Labour,বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস,
বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস

World Day Against Child Labour

১২ই জুন ‘বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস’২০০২ সালে প্রথম এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা’ বা আইএলও শিশুশ্রম নির্মূলের উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর থেকে প্রতিবছর ১২ জুন ‘বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। 

দিবসের পালনের লক্ষ্য :

এই দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হল বিশ্বজুড়ে শিশুশ্রমের ব্যাপকতা এবং এটি নির্মূল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টার দিকে সাধারণ মানুষ-সহ বিভিন্ন দেশের সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করা।

পটভূমি ও ইতিহাস:

ইতালিতে শুরু হওয়া ইউরোপীয় নবজাগরণের সূত্র ধরে প্রথমে ইংল্যান্ডে এবং পরে সমগ্র ইউরোপে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়। ঐতিহাসিকভাবে, এই শিল্প বিপ্লবের সময় থেকেই শিশুরা শিল্প কারখানায় বিভিন্ন বিপজ্জনক কাজে নিযুক্ত আছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বিপদজনক শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে আসছে। ২০০২ সালে ILO আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস’ পালনের ঘোষণা করে এবং এই সমস্যা মোকাবেলায় জন্য একটি সম্মিলিত বৈশ্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে।

এই পটভূমিতেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০২১ সালকে ‘শিশু শ্রম নির্মলের আন্তর্জাতিক বছর’ হিসেবে ঘোষণা করে। এবং এই ঘোষণাকে বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় 

শিশুশ্রম বিরোধী কর্মসূচি ও কার্যক্রম:

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উদ্যোগে ‘বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস’ উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সচেতনতামূলক প্রচার, লিফলেট বিতরণ এবং বিশেষ পরিদর্শনের আয়োজন করা হয়। স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের মধ্যে শিশুশ্রমের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। অনেক দেশেই শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেগুলোর বাস্তবায়নে কাজ চলছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি ৮.৭) আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ:

বিশ্বজুড়ে এখনও লক্ষ লক্ষ শিশু শিশুশ্রমের শিকার। সীমাহীন দারিদ্র্য, শিক্ষার সুযোগের অভাব, অপর্যাপ্ত শ্রম আইন প্রয়োগ, বৈষম্য এবং সস্তা শ্রমের চাহিদা এই সমস্যা এর মূল কারণ। শিশুশ্রম শিশুদের শুধুমাত্র শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে না, বরং তাদের বিপজ্জনক কাজের পরিবেশ, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন এবং ইউনিসেফ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনার সময় ন' কোটি ৭০ লক্ষ বালক এবং ৬ কোটি ৩০ লক্ষ বালিকা শিশু শ্রমিক এ পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু শ্রমিক

বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশ গুলিতে যত শিশু আছে, আফ্রিকায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। শতকরা ৭৪ জন শিশু শ্রমিক কোনরকম সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা পায় না।

ভারতের শিশুশ্রম সংক্রান্ত পরিস্থিতি :

২০১১ সালের জনগণনার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী এই সংখ্যাটা হুহু করে বেড়েছে করোনার সময়। 

ভারতে শিশুশ্রম আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় হল, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে ‘চাইল্ড লেবার প্রহিবিশন এন্ড রেগুলেশন অ্যাক্টে’ দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা একেবারেই মামুলি

বিগত এক দশকে শিশুশ্রম বন্ধ করার কোন উদ্যোগ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি নিয়েছে বলে জানা নেই।

দিবসটির গুরুত্ব :

সচেতনতা বৃদ্ধি করে: এই দিনটি শিশুশ্রমের কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কর্মপ্রেরণা: শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনকে উৎসাহিত করা এবং সরকার, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক সংগঠন, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষকে একত্রিত করে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করা।
শিশুদের অধিকার রক্ষা: শিশুদের শিক্ষার অধিকার, নিরাপদ শৈশব এবং সুস্থ বিকাশের অধিকার নিশ্চিত করা।
নীতি ও আইনের বাস্তবায়ন: শিশুশ্রম সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশন (যেমন ILO কনভেনশন নং ১৩৮ - কর্মসংস্থানের সর্বনিম্ন বয়স এবং ILO কনভেনশন নং ১৮২ - শিশুশ্রমের সবচেয়ে খারাপ রূপ) এবং জাতীয় আইনগুলির কার্যকর প্রয়োগের উপর জোর দেওয়া।

শিশুশ্রম সংক্রান্ত উক্তি :

“আমরা যদি শিশুশ্রম বন্ধ করার ব্যাপারে সহমত না হতে পারি, তাহলে আমরা এগোনোর জন্য প্রস্তুত নই।”

— অ্যালেক্সিস হার্ম্যান

শিশু শ্রম বিষয়ে আরও উক্তি পড়ুন এখানে

---------xx--------

মন্তব্যসমূহ

🔰 ব্যক্তি অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন : 🔍

আরও দেখান

🔰 তথ্য তালাশ : জনপ্রিয় ব্যক্তি ও বিষয়গুলো দেখুন:

উসেইন বোল্ট, ১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ড

ভারতের জাতীয় প্রতীকের নকশাকার

প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ার-এর জন্মদিন

আন্তর্জাতিক সাইকেল দিবস

বিরসা মুন্ডার মৃত্যুদিন

মায়া অ্যাঞ্জেলু প্রয়াত হন

চে গেভারার জন্মদিন

মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজীর রাজ্যভিষেক

প্রথম অস্কার পুরস্কার

তথ্য তালাশ : অনলাইন সংকলন

আলী হোসেন, লেখক,
তথ্য তালাশ
সুপ্রিয় পাঠক,

তথ্য তালাশ-এর অনলাইন সংকলনে আপনাকে স্বাগত। 

প্রতিদিন, প্রতি নিয়ত বিশ্বজুড়ে ঘটে চলেছে নানান ঘটনা। কিছু বিখ্যাত, কিছু অখ্যাত, আবার কিছু কুখ্যাতও। এই সব হরেক ঘটনার মধ্যে থাকে এমন কিছু ঘটনা, যা মানুষ মনে রাখতে চায়, চায় স্মরণ করতে।

তথ্য তালাশ সেই লক্ষ্য নিয়েই তৈরি। যেহেতু এটি ডিজিটাল ফরম্যাটে তৈরি, তাই যখনই প্রয়োজন পড়বে, আপনার হাতের মোবাইলে হাত রাখলেই আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মত সামনে হাজির হবে তথ্য তালাশ

আপনি কি পড়তে চান এই সংকলনটি! ক্লিক করুন এখানে