মালালা ইউসুফ জাইয়ের জন্মদিন
মালালা ইউসুফ জাইয়ের জন্মদিন :
Malala Yousafzai's Birthday
১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই। মালালা ইউসুফজ চাই জন্মগ্রহণ করেন পাকিস্তানে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। ‘হি নেমড মি মালালা’ হল তাঁর জীবন নিয়ে তৈরি হওয়া তথ্যচিত্র।
মালালা ইউসুফজাই (জন্ম: ১২ জুলাই, ১৯৯৭) একজন পাকিস্তানি নারী শিক্ষা আন্দোলনকর্মী, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন প্রযোজক, এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। তিনি ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।
প্রাথমিক জীবন :
মালালা পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত উপত্যকার মিনগোরায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই (একজন শিক্ষা aktivist)-এর অনুপ্রেরণায় নারীশিক্ষার পক্ষে সোচ্চার হন। ২০০৭ সালে মাওলানা ফজলুল্লাহর নেতৃত্বে পাকিস্তানি তালেবানের একটি শাখা সোয়াত উপত্যকা দখল করে এবং মেয়েদের লেখাপড়া নিষিদ্ধ করে।
শিক্ষা আন্দোলন :
এই পরিস্থিতিতে মালালা মাত্র ১১ বছর বয়স থেকে বিবিসিতে ‘গুল মাকাই’ ছদ্মনামে ব্লগ লেখা শুরু করেন, যেখানে তিনি তালেবানদের অত্যাচারের মুখে মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের কথা তুলে ধরেন। তাঁর লেখালেখি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
তালেবানদের আক্রমণ:
শিক্ষা ও নারী অধিকারের জন্য তার এই কর্মকাণ্ড তালেবানদের চোখে পড়ে। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর, স্কুল থেকে ফেরার পথে মালালা এবং তাঁর দুই বান্ধবী তালেবানদের গুলিতে আহত হন। মালালাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে নারীশিক্ষার অধিকার নিয়ে আলোচনা বাড়ায়। মালালা আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষা আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হন।
সুস্থ হওয়ার পর কাজ :
সুস্থ হওয়ার পর মালালা দ্বিগুণ উদ্যমে তার কাজ চালিয়ে যান। তিনি সারা বিশ্বে নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ করছেন।
১) মালালা ফান্ড:
২০১৩ সালে মালালা ফান্ড (Malala Fund) গঠন করা হয়, যা বিশ্বজুড়ে সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের শিক্ষায় সহায়তা করে। এই ফান্ড বর্তমানে আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ভারত, ব্রাজিল এবং সিরিয়ার মতো ছয়টি দেশে নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ করছে।
২) আত্মজীবনী:
তিনি ‘আই অ্যাম মালালা: হাউ ওয়ান গার্ল স্টুড আপ ফর এডুকেশন অ্যান্ড চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড’ (I Am Malala: How One Girl Stood Up for Education and Changed the World) নামে একটি আত্মজীবনী লিখেছেন।
৩) প্রকাশিত বই ও ডকুমেন্টারি:
- ‘আই অ্যাম মালালা’ (২০১৩): তাঁর আত্মজীবনী, যা বিশ্বব্যাপী বেস্টসেলার।
- ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ ও ‘জাতিসংঘ’-এ ভাষণদান।
- Netflix ডকুমেন্টারি ‘He Named Me Malala’ (২০১৫)।
সম্মাননা :
নোবেল শান্তি পুরস্কার: ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর, মালালা ইউসুফজাই ভারতীয় সমাজকর্মী কৈলাশ সত্যার্থীর সাথে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে এই পুরস্কার পেয়ে তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হওয়ার সম্মান অর্জন করেন।
মালালা দিবস: ২০১৩ সালের ১২ জুলাই, তার ১৬তম জন্মদিনে জাতিসংঘ এই দিনটিকে ‘মালালা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।
টাইম ম্যাগাজিন-এর ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তি’ তালিকায় বহুবার অন্তর্ভুক্তি।
ব্যক্তিগত জীবন:
- ২০২১ সালে তিনি আসের মালিক (পাকিস্তানি ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা)-কে বিয়ে করেন।
- বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন এবং বিশ্বজুড়ে শিক্ষা, নারীস্বাধীনতা ও শান্তির জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে মালালা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পলিটিক্স, ফিলোসফি এবং ইকোনমিকস বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি ভবিষ্যতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চান এবং প্রয়াত বেনজির ভুট্টোকে তাঁর অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মালালা ইউসুফজাই আজ নারীশিক্ষা, সাহস ও অদম্য সংগ্রামের আন্তর্জাতিক আইকন। তাঁর জন্মদিন ১২ জুলাই বিশ্বব্যাপী ‘মালালা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন