সিকিমের ভারতের অন্তর্ভুক্তি
সিকিমের ভারতের অন্তর্ভুক্তি
১৯৭৫ সালের ১৬ ই মে সিকিম ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। সিকিম ভারতের ২২ তম অঙ্গরাজ্য। আয়তনের দিক থেকে সিকিম ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। এই রাজ্যের রাজধানীর নাম গ্যাংটক।
সিকিম ১৯৭৫ সালে ভারতের সাথে যুক্ত হয়, মূলত নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে:
১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
- সিকিম একটি স্বাধীন রাজতন্ত্র ছিল, তবে ব্রিটিশ রাজের অধীনে এটি একটি ‘প্রোটেক্টোরেট’ (সুরক্ষিত রাজ্য) হিসেবে থাকত।
- ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর, সিকিম ভারত-সিকিম চুক্তি (১৯৫০) স্বাক্ষর করে, যাতে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভারতের হাতে দেওয়া হয়, কিন্তু অভ্যন্তরীণ শাসন সিকিমের রাজার (চোগ্যাল) হাতে থাকে।
২. রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণআন্দোলন:
- ১৯৭০-এর দশকে সিকিমে রাজা ‘পালডেন থন্ডুপ নামগিয়াল’-এর শাসনের বিরুদ্ধে গণঅসন্তোষ বৃদ্ধি পায়।
- সিকিমের জনগণ (বিশেষ করে নেপালি-ভাষী অধিকাংশ) গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে এবং রাজার স্বৈরাচারী শাসনের বিরোধিতা করে।
- ১৯৭৩ সালে রাজপ্রাসাদের সামনে বিক্ষোভের পরিস্থিতি তৈরি হলে, ভারত হস্তক্ষেপ করে ও ‘একটি নতুন চুক্তি’ করে, যাতে রাজার ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয় এবং ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
৩. ভারতের সম্পৃক্ততা ও গণভোট:
- ১৯৭৫ সালে সিকিমের জনগণ একটি ‘গণভোটে’ (Referendum) ভারতের সাথে পূর্ণ একীভূত হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়।
- সিকিমের বিধানসভা ‘ভারতের সাথে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব’ পাস করে এবং ভারতের সংসদ ‘৩৬তম সংবিধান সংশোধনী (১৯৭৫)’ পাস করে সিকিমকে ‘ভারতের ২২তম রাজ্য’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।
৪. কারণসমূহ:
- জনগণের ইচ্ছা: সিকিমের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ (বিশেষ করে নেপালি-ভাষী) ভারতের সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন।
- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: রাজার শাসন অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল, ভারতের সাথে যুক্ত হলে শান্তি ফিরে আসে।
- ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা: চীন-ভারত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সিকিমের কৌশলগত অবস্থান ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বিতর্ক:
কিছু লোক মনে করে যে সিকিমের অন্তর্ভুক্তি ছিল ‘ভারতের একটি বলপ্রয়োগমূলক পদক্ষেপ’, কিন্তু সরকারি দাবি অনুযায়ী এটি ছিল ‘জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন’।
সিকিম এখন ভারতের একটি শান্তিপূর্ণ ও উন্নত রাজ্য, যেখানে বিশেষ সংবিধানগত সুরক্ষা রয়েছে।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন