বিপ্লবী গণেশ ঘোষের জন্মদিন

বিপ্লবী গণেশ ঘোষের জন্মদিন

Birthday of revolutionary Ganesh Ghosh

১৯০০ সালের ২২ জুন। বিপ্লবী গণেশ ঘোষের জন্মদিন। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র ফিল্ড মার্শাল ছিলেন গণেশ ঘোষ। সারা জীবন মিলিয়ে ২৭ বছর কারা বাস করেছেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে। ১৯৫২ ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ সালে বেলগাছিয়া কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে লোকসভায় সংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি সংসদীয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর এসএসকেএম হাসপাতালে তার জীবন অবসান হয়। 

বিপ্লবী গণেশ ঘোষ ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অগ্নিযুগের যোদ্ধা, যার জীবন ও কর্ম বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে গভীর প্রভাব রেখেছিল।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন :

💁 জন্ম: ১৯০০ সালের ২২ জুন (আজ থেকে ১২৪ বছর আগে) ব্রিটিশ ভারতের চট্টগ্রামে (বর্তমান বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণ করেন।
👫 পরিবার: তাঁর পিতা গিরিজাপতি ঘোষ এবং মাতা লক্ষ্মীমণি দেবী। তাঁর ভাই মহেন্দ্র ঘোষও ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী।

শিক্ষা ও বিপ্লবী দীক্ষা :

📚 চট্টগ্রামের কানুনগোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল-এ পড়াশোনা করেন।
👲 অল্প বয়সেই অনুশীলন সমিতি-র সংস্পর্শে আসেন এবং মাস্টারদা সূর্য সেন-এর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের বিপ্লবী দলে যোগ দেন।

বিপ্লবী কর্মকাণ্ড :

১) চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন (১৯৩০):

💥 গণেশ ঘোষ ছিলেন এই ঐতিহাসিক অভিযানের অন্যতম প্রধান সদস্য।
💥 ১৮ এপ্রিল ১৯৩০ তারিখে সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা চট্টগ্রাম পুলিশ অস্ত্রাগার ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখল করে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
💥 গণেশ ঘোষ জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে বিপ্লবীরা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।

২) ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ (১৯৩০):

💥 বিপ্লবীরা চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলা চালায়, যেখানে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা অবস্থান করতেন।
💥 গণেশ ঘোষ এই অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

৩) অন্যান্য সশস্ত্র কার্যক্রম:

• তিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত-এর মতো বিপ্লবীদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
• ব্রিটিশ পুলিশ ও অফিসারদের লক্ষ্য করে একাধিক গেরিলা হামলায় জড়িত ছিলেন।

গ্রেফতার ও কারাবাস :

১৯৩০ সালেই ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার মামলা-তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রায় ১০ বছর কারাভোগের পর ১৯৪৬ সালে মুক্তি পান।

স্বাধীনতা-পরবর্তী জীবন :

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি কলকাতায় চলে আসেন। কমিউনিস্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (CPI)-তে যোগ দেন। শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

মৃত্যু ও স্মৃতি :

১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। আজও চট্টগ্রাম ও কলকাতায় বিপ্লবী গণেশ ঘোষের স্মৃতি অম্লান। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।

উপসংহার :

গণেশ ঘোষ ছিলেন অদম্য সাহস ও দেশপ্রেমের প্রতীক। আজ তাঁর জন্মদিনে আমরা এই মহান বিপ্লবীকে স্মরণ করছি, যাঁর ত্যাগ ও সংগ্রাম ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।