বিজ্ঞানী প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের প্রয়াণ দিবস

বিজ্ঞানী প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের প্রয়াণ দিবস

Death anniversary of scientist Prashant Chandra Mahalanobis

১৯৭২ সালের ২৮ জুন। বিজ্ঞানী প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ (Prasanta Chandra Mahalanobis) প্রয়াত হন। তাঁকে আধুনিক পরিসংখ্যান বিদ্যার জনক বলা হয়। ১৯৩১ সালে কলকাতার বরানগরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট (Indian Statistical Institute, ISI)। তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হল ‘মহলানবীশ দূরত্ব (Mahalanobis Distance)। তাঁর কাজ অর্থনীতি, কৃষি, নমুনা জরিপ এবং পরিকল্পনা নীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের ব্যক্তি জীবন:

জন্ম: ১৮৯৩ সালের ২৯ জুন, কলকাতায়।
মৃত্যু: ১৯৭২ সালের ২৮ জুন। কলকাতায়।
তাঁর সহধর্মিনীর নাম নীতিকা (পূর্ব নাম মৃণালিনী সেন), যিনি একজন সমাজকর্মী ছিলেন।
তাঁর ভাইপো প্রসন্ত কুমার মহলানবীশ একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ছিলেন।
মহলানবীশ বিজ্ঞান ও সমাজের উন্নয়নে গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন এবং বিজ্ঞানকে জনকল্যাণে ব্যবহারের পক্ষে কাজ করতেন।

শিক্ষা জীবন :

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হন। পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান পড়াশোনা করেন। কেমব্রিজে থাকাকালীন পরিসংখ্যানবিদ কার্ল পিয়ারসন-এর কাজ তাঁকে অনুপ্রাণিত করে।

গবেষণা ও অবদান:

১. মহলানবীশ দূরত্ব (Mahalanobis Distance):
এটি একটি পরিমাপ যা ডেটা পয়েন্টগুলির মধ্যে পার্থক্য এবং একটি ডেটা সেটের গড় থেকে তাদের বিচ্যুতি নির্ণয় করে। এই ধারণা বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ, প্যাটার্ন শনাক্তকরণ এবং ক্লাস্টারিং-এ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
২. ভারতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট :
কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত এই ইনস্টিটিউট বিশ্বব্যাপী পরিসংখ্যান গবেষণার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানে ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে (NSS) এবং আরওপি (Random Sampling) পদ্ধতির উন্নয়ন হয়, যা ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫৬):
মহলানবীশ নেহরু সরকারের প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন এবং ভারতে শিল্পায়নের জন্য ‘মহলানবীশ মডেল’ প্রস্তাব করেন, যা ভারী শিল্পের উপর জোর দেয়।
৪. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:
তিনি ‘রয়্যাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল সোসাইটি’-এর ফেলো নির্বাচিত হন এবং ভারতের জাতীয় বিজ্ঞান আকাদেমি-র সদস্য ছিলেন।

পুরস্কার ও সম্মান:

পদ্মভূষণ (১৯৬৮) – ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।
সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিন পুরস্কার (পরিসংখ্যানে অবদানের জন্য)।
তাঁর নামে মহলানবীশ জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয় পরিসংখ্যানে উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য।

মহলানবীশের উত্তরাধিকার:

তাঁর প্রতিষ্ঠিত ISI আজও বিশ্বের শীর্ষ পরিসংখ্যান গবেষণা কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি। তাঁর উন্নত পদ্ধতিগুলি কৃষি, অর্থনীতি, জেনেটিক্স এবং মহাকাশ গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের কাজেও তাঁর মডেলগুলি ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে।

মহলানবীশ শুধু একজন বিজ্ঞানীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী চিন্তাবিদ যাঁর কাজ আজও বৈজ্ঞানিক ও নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক।
--------xx-------

মন্তব্যসমূহ

🔰 ব্যক্তি অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন : 🔍

আরও দেখান

🔰 বিষয় অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন :🔍

আরও দেখান

🔰 তথ্য তালাশ : জনপ্রিয় ব্যক্তি ও বিষয়গুলো দেখুন:

উসেইন বোল্ট, ১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ড

ভারতের জাতীয় প্রতীকের নকশাকার

প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ার-এর জন্মদিন

শুভাংশু শুক্লার মহাকাশ পাড়ি

আন্তর্জাতিক সাইকেল দিবস

বিরসা মুন্ডার মৃত্যুদিন

জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ

মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজীর রাজ্যভিষেক

ভারতে প্রথম জরুরি অবস্থা ঘোষণা

তথ্য তালাশ : অনলাইন সংকলন

আলী হোসেন, লেখক,
তথ্য তালাশ
সুপ্রিয় পাঠক,

তথ্য তালাশ-এর অনলাইন সংকলনে আপনাকে স্বাগত। 

প্রতিদিন, প্রতি নিয়ত বিশ্বজুড়ে ঘটে চলেছে নানান ঘটনা। কিছু বিখ্যাত, কিছু অখ্যাত, আবার কিছু কুখ্যাতও। এই সব হরেক ঘটনার মধ্যে থাকে এমন কিছু ঘটনা, যা মানুষ মনে রাখতে চায়, চায় স্মরণ করতে।

তথ্য তালাশ সেই লক্ষ্য নিয়েই তৈরি। যেহেতু এটি ডিজিটাল ফরম্যাটে তৈরি, তাই যখনই প্রয়োজন পড়বে, আপনার হাতের মোবাইলে হাত রাখলেই আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মত সামনে হাজির হবে তথ্য তালাশ

আপনি কি পড়তে চান এই সংকলনটি! ক্লিক করুন এখানে