এস ওয়াজেদ আলীর প্রয়াণ দিবস
এস ওয়াজেদ আলীর প্রয়াণ দিবস
S. Wazed Ali's Death Anniversary
১৯৫১ সালের ১০ জুন। বিশিষ্ট বাঙালি সাহিত্যিক এস ওয়াজেদ আলির প্রয়াণ দিবস। ‘প্রাচ্য ও প্রতীচ্য’, ‘মনের মানুষ’, ‘মুসলিম সংস্কৃতি ও সাহিত্য’, ‘গুলদস্তা’, ‘বাংলার রূপ’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম। তিনি উর্দু ও বাংলা উভয় ভাষায় সাহিত্য রচনা করতেন।সৈয়দ ওয়াজেদ আলী ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার এবং চিন্তাবিদ। মূলত প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনা, মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহজ-সরল অথচ গভীর জীবনবোধ সম্পন্ন লেখার জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে এবং নারী শিক্ষার প্রচারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম ও চিন্তাধারা আজও প্রাসঙ্গিক।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
১৮৯০ সালে ৪ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) হুগলী জেলার শ্রীরামপুর মহকুমার বড় তাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ছিল সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনস্ক।শিক্ষাজীবন :
১৮৯৫ সালে বড় তাজপুর গ্রামের পাঠশালায় ওয়াজেদ আলীর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরে তিনি শিলং মোখার হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯০৬ সালে স্বর্ণপদক লাভ করে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আলীগড় কলেজ থেকে ১৯০৮ সালে আইএ এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১০ সালে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরে আইন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ড যান। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ট্রাইপস ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন:
ইংল্যান্ড থেকে ফিরে ১৯১৫ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইনব্যবসার মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯২৩ সালে তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সির ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি ১৯২৫ সালে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস (বিচার বিভাগ) এ যোগদান করেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।সাহিত্যকর্ম:
এস ওয়াজেদ আলী মূলত প্রবন্ধ, ছোটগল্প এবং ভ্রমণকাহিনি রচনা করেছেন। তাঁর লেখায় প্রজ্ঞা, রসবোধ এবং উদার মানসিকতার ছাপ সুস্পষ্ট। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জ্ঞান ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর লেখায় মুসলিম সমাজের পশ্চাৎপদতা দূরীকরণে আধুনিক শিক্ষার গুরুত্ব এবং নারী শিক্ষার প্রসারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি লেখনী ধারণ করেছিলেন।লেখক হিসেবে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা ও ভ্রমণকাহিনী রচনায় তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে: জীবনের শিল্প (১৯৪১), প্রাচ্য ও প্রতীচ্য (১৯৪৩), ভবিষ্যতের বাঙালি (১৯৪৩), আকবরের রাষ্ট্র সাধনা (১৯৪৯), মুসলিম সংস্কৃতির আদর্শ, গুলদাস্তা (ছোটগল্প সংকলন, ১৯২৭), মাশুকের দরবার (উপন্যাস, ১৯৩০), বাদশাহী গল্প (১৯৪৪), গল্পের মজলিশ (১৯৪৪); উপন্যাস গ্রানাডার শেষ বীর (১৯৪০), নারী (প্রবন্ধ সংকলন),পশ্চিম বাংলার রূপ (ভ্রমণ কাহিনি) প্রভৃতি।
তাঁর লেখা ‘ভবিষ্যতের বাঙালি’(১৯৫৭) হল সবচেয়ে বিখ্যাত রচনাগুলির মধ্যে একটি। এই প্রবন্ধে তিনি বাঙালির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা তুলে ধরেছেন এবং বাঙালিকে আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক ও উদার হতে আহ্বান জানিয়েছেন।
চিন্তাধারা ও প্রভাব:
এস ওয়াজেদ আলি ছিলেন একজন উদার, ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রগতিশীল চিন্তাবিদ। তিনি বাংলার মুসলিম সমাজের নবজাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর লেখনী বাঙালি সমাজে আধুনিকতার বীজ বপনে সাহায্য করেছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, জ্ঞান ও যুক্তির মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।প্রয়াণ:
এই বিশিষ্ট সাহিত্যিক ১০ জুন, ১৯৬১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রয়াণ বাংলা সাহিত্যের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তবে তাঁর কালজয়ী রচনাগুলি আজও পাঠককে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।----------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন