ভারতের স্বাধীনতা দিবস

ভারতের স্বাধীনতা দিবস

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। ভারতের স্বাধীনতা দিবস (Independence Day)। ভারতের স্বাধীনতা দিবস হল জাতীয় গৌরব, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রতীক। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস, যা প্রতি বছর ১৫ই আগস্ট তারিখে পালন করা হয়। ১৯৪৭ সালের এই দিনে ভারত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে। এই দিনটি ভারতের ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা করে এবং এটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য গর্ব ও আনন্দের দিন।

স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস

* দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম: 

ভারতের স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দুই শতাধিক বছর ধরে বহু সংগ্রাম, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ভারত তার স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস আন্দোলন, সুভাষ চন্দ্র বসুর সশস্ত্র সংগ্রাম, এবং অন্যান্য অসংখ্য বিপ্লবীর আত্মত্যাগ এই স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করে।

* ভারত ছাড়ো আন্দোলন: 

১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধীর "ভারত ছাড়ো" আন্দোলনের ডাক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক বিশাল গণজাগরণ সৃষ্টি করে। এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশরা বুঝতে পারে যে ভারতে তাদের শাসন টিকিয়ে রাখা অসম্ভব।

* ক্ষমতা হস্তান্তর: 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেনের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে তারা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই ব্রিটিশ হাউজ অফ কমন্সে ‘ভারতীয় স্বাধীনতা বিল’ (Indian Independence Act)পেশ করা হয়, যা ১৮ জুলাই গৃহীত হয়। এই বিলের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের প্রস্তাব করা হয়।

* স্বাধীনতা লাভ: 

১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়। এর পরের দিন, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে জওহরলাল নেহেরু তাঁর দিল্লির লালকেল্লায় বিখ্যাত ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ (Tryst with Destiny) ভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “Long years ago, we made a tryst with destiny... At the stroke of the midnight hour, when the world sleeps, India will awake to life and freedom.” এই দিনেই জওহরলাল নেহেরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল

স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব

স্বাধীনতা দিবস কেবল একটি ছুটির দিন নয়, বরং এর গভীর তাৎপর্য রয়েছে:

ক) স্বাধীনতার উদযাপন: 

এটি সেইসব অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহীদদের আত্মত্যাগ এবং বীরত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন, যারা ভারতের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

১) প্রধান অনুষ্ঠান:

- দিল্লির লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন (সকাল ৭:৩০ টায়)।
- ২১ তোপ salut দেওয়া হয়, জাতীয় সঙ্গীত ‘জন গণ মন’ গাওয়া হয়।
- প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন, যা দেশব্যাপী সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

২) আচার-অনুষ্ঠান:

- পতাকা উত্তোলন: স্কুল, সরকারি অফিস, আবাসিক এলাকায় তিরঙ্গা উত্তোলন।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: ছাত্রছাত্রীদের নৃত্য, নাটক, দেশাত্মবোধক গান।
- কেক কাটা, মিছিল ও শোভাযাত্রা: ‘বন্দে মাতরম’ ও ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়।

৩) বিশেষ প্রতীক:

- পতাকার রং: কেরসাফ্রান: ত্যাগ ও সাহস। সাদা: শান্তি ও সত্য। সবুজ: সমৃদ্ধি ও বিশ্বাস। অশোক চক্র: ন্যায় ও প্রগতি (চক্রে ২৪টি spokes)।

৪) জাতীয় ছুটির দিন:

সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, টিভি ও রেডিওতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়।

খ) ঐক্য ও সংহতির প্রতীক: 

এই দিনটি সমস্ত ভারতীয়কে একত্রিত করে, তাদের মধ্যে জাতীয় গর্ব ও দেশপ্রেমের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। যদিও ভারত বিভাজনের বেদনাদায়ক ঘটনাও এই দিনের সঙ্গে জড়িত, তবু এটি সকল ভারতীয়ের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির বার্তা দেয়।

গ) গণতন্ত্র ও স্বশাসনের প্রতিষ্ঠা: 

স্বাধীনতা দিবস ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ভারতে একটি গণতান্ত্রিক ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার প্রতীক। এটি আমাদের দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র এবং মৌলিক অধিকারের গুরুত্বকে মনে করিয়ে দেয়।

ঘ) জাতীয় গর্বের প্রতিফলন: 

এই দিনটি প্রতিটি ভারতীয়কে দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অগ্রগতির প্রতি গর্বিত হওয়ার সুযোগ দেয়। এটি আমাদের দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।

স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন

ভারতের স্বাধীনতা দিবস দেশজুড়ে অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়।

* জাতীয় অনুষ্ঠান: 

মূল অনুষ্ঠানটি দিল্লির লাল কেল্লায় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এই অনুষ্ঠানে দেশের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।

* রাজ্য ও স্থানীয় স্তরের উদযাপন: 

দেশের প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলোতেও পতাকা উত্তোলন ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়।

* অন্যান্য কার্যক্রম: 

এই দিনে বিভিন্ন সরকারি ভবন, স্কুল ও অফিস জাতীয় পতাকার রঙে (গেরুয়া, সাদা ও সবুজ) সাজানো হয়। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, যেমন - নৃত্য, সঙ্গীত, নাটক, এবং শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য :

১) স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ: লক্ষ্য লক্ষ্য শহীদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানানো।
২) জাতীয় ঐক্যের প্রতীক: ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতির বৈচিত্র্য সত্ত্বেও ভারতের একাত্মতা প্রকাশ।
৩) ভবিষ্যতের অঙ্গীকার: গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমতার মূল্যবোধকে পুনর্ব্যক্ত করা।
--------xx-------

“স্বাধীনতা কখনও দেওয়া হয় না, এটা অর্জন করতে হয়।”— মহাত্মা গান্ধী

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট :

২০২৩ সালে ভারত স্বাধীনতার ‘৭৬তম বছর’ উদযাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ (প্রতিটি ঘরে তিরঙ্গা) প্রচার শুরু করেন, যাতে নাগরিকেরা নিজ বাড়িতে পতাকা উত্তোলন করেন। এছাড়াও, “আজাদি কা অমৃত মহোৎসব” (স্বাধীনতার ৭৫ বছর) উদযাপিত হচ্ছে।

স্বাধীনতা দিবস শুধু উৎসব নয়, এটি জাতির অগ্রগতি ও দায়িত্ববোধের প্রতিফলন।🇮🇳

মন্তব্যসমূহ

🔰 ব্যক্তি অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন : 🔍

আরও দেখান

🔰 বিষয় অনুযায়ী তথ্য খুঁজুন :🔍

আরও দেখান

🔰 তথ্য তালাশ : জনপ্রিয় ব্যক্তি ও বিষয়গুলো দেখুন:

উসেইন বোল্ট, ১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ড

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মদিন

শুভাংশু শুক্লার মহাকাশ পাড়ি

ভারতের জাতীয় প্রতীকের নকশাকার

প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ার-এর জন্মদিন

জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ

আন্তর্জাতিক সাইকেল দিবস

বিরসা মুন্ডার মৃত্যুদিন

মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজীর রাজ্যভিষেক

তথ্য তালাশ : অনলাইন সংকলন

আলী হোসেন, লেখক,
তথ্য তালাশ
সুপ্রিয় পাঠক,

তথ্য তালাশ-এর অনলাইন সংকলনে আপনাকে স্বাগত। 

প্রতিদিন, প্রতি নিয়ত বিশ্বজুড়ে ঘটে চলেছে নানান ঘটনা। কিছু বিখ্যাত, কিছু অখ্যাত, আবার কিছু কুখ্যাতও। এই সব হরেক ঘটনার মধ্যে থাকে এমন কিছু ঘটনা, যা মানুষ মনে রাখতে চায়, চায় স্মরণ করতে।

তথ্য তালাশ সেই লক্ষ্য নিয়েই তৈরি। যেহেতু এটি ডিজিটাল ফরম্যাটে তৈরি, তাই যখনই প্রয়োজন পড়বে, আপনার হাতের মোবাইলে হাত রাখলেই আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মত সামনে হাজির হবে তথ্য তালাশ

আপনি কি পড়তে চান এই সংকলনটি! ক্লিক করুন এখানে