মুজাফফর আহমেদের জন্মদিন
মুজাফফর আহমেদের জন্মদিন :
Muzaffar Ahmed's Birthday
১৮৮৯ সালের ৫ আগস্ট। মুজাফফর আহমেদের জন্মদিন। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হলেন মুজাফফর আহমেদ। ১৮৮৯ সালে আজকের তারিখে অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের অন্তর্গত সন্দ্বীপ দ্বীপের মুছাপুর গ্রামের তাঁর জন্ম। ১৯৭৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বিপ্লবের কথা জানার পর থেকেই তিনি ভারতের বুকে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।জন্ম ও বংশ পরিচয় :
১৮৮৯ সালের ৫ আগস্ট সোমবারে (বাংলা শ্রাবণ) অবিভক্ত বাংলার নোয়াখালি জেলার অন্তর্ভুক্ত বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ দ্বীপের মুসাপুর গ্রামে কমরেড মোজাফফর আহমদের জন্ম। তাঁর পিতা মুন্সি মনসুর আলী সাহেব ছিলেন একজন মোক্তার। মায়ের নাম চুনাবিবি। তাঁর অগ্রজ তিন সহোদর ভাই হলেন মহব্বত আলী, মকবুলী আহমদ ও খুরশিদ আলম। কমরেড মুজফফর আহমদ এর জীবনকালেই তাঁদের মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রী ও কন্যা দীর্ঘদিন ধরে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে ছিলেন। তিনি একজন ভারতীয়, বাঙালি রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
কমরেড মুজফফর আহমদ সন্দীপের কার্গিল হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। তারপর তিনি নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে ১৯১৩ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় (ম্যাট্রিকুলেশন) পাশ করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯১৩ সালেই কলকাতা আসেন। হুগলি মহসিন কলেজে তিনি দু-তিন মাস আই এ ক্লাসে পড়াশোনা করেন।পরে বঙ্গবাসী কলেজেও কিছুকাল পড়াশোনা করেন। বঙ্গবাসী কলেজে আই.এ. পড়ার সময় রাইটার্স বিল্ডিং-এর একটি ছাপাখানায় চাকরি করেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুবাদক হিসেবে কাজ করেন।সাংবাদিকতা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় মহান নভেম্বর বিপ্লব-এর প্রভাব পড়ে সারা বিশ্বে। ১৯১৮ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সহ-সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি ‘দ্বৈপায়ন’ ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন। ১৯২০ সালে তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় অধিবেশনে লেনিনের নেতৃত্বে ঔপনিবেশিক দেশগুলিতে বিপ্লবের কর্মসূচি গৃহীত হয়। এরপর চিনে ও ভারতবর্ষে বৈপ্লবিক আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম তীব্র হয়ে ওঠে।
রাজনৈতিক জীবন :
এই সময় থেকে মুজফফর আহমদের জীবনেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। ১৯২১ সালের শুরুতে দেশত্যাগী ভারতীয় মোহাজীর বিপ্লবীদের নিয়ে মধ্য এশিয়ার তাসখন্দে এবং পরে মস্কো শহরে ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। বাংলায় তিনিই প্রথম পার্টির সদস্য। এই সময় কমরেড মুজাফফর আহমদের সঙ্গে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের যোগসূত্র স্থাপিত হয়। ১৯২০ সালেই তিনি সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী হবার সিদ্ধান্ত নেন।
১) আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের যোগাযোগ :
১৯২০ সালে কাজী নজরুল ইসলামের সাথে তিনি ‘নবযুগ’ নামে একটি পত্রিকা চালু করেন। ১৯২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে মুজফফর আহমদ ও নজরুল ইসলামের উদ্যোগে মৌলভী এ কে ফজলুল হক 'নবযুগ' নামে একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা বের করেন। ‘নবযুগে'র যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন মুজফফর আহমদ ও কাজী নজরুল ইসলাম। এখানেই তাঁর সঙ্গে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তিনি শ্রমিকদের সংগঠিত করা এবং কমিউনিস্ট মতবাদ প্রচারের সচেষ্ট হন। গোপনে তিনি কমিউনিস্ট পুস্তকাদি ও পত্র-পত্রিকা সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে গোপনে কমিউনিজমের প্রচার আরম্ভ করেন। নবযুগ' পত্রিকায় শ্রমিকদের জীবন,সমস্যাবলী এবং সংগ্রাম নিয়ে তিনি অনেক প্রবন্ধ লেখেন।২) কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা
১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলাম অর্ধসাপ্তাহিক ‘ধুমকেতু’ বের করেন। ‘দ্বৈপায়ন’ ছদ্মনামে মুজফফর আহমদ ভারতের রাজনৈতিক সমস্যাবলী নিয়ে অনেক প্রবন্ধ লেখেন। কমিউনিস্ট মতবাদ প্রচারের স্রাোত আটকাতে ব্রিটিশ সরকার আরও তৎপর হয়ে ওঠে। ১৯২২ সালের শেষে গয়া কংগ্রেসের অধিবেশনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মসূচি সংবলিত এক সুদীর্ঘ ইশতেহার প্রচারিত হয়। এই বছরই ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হলে তিনি এর প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হন। [এর আগে ১৯২১ সালে আমেদাবাদ কংগ্রেসেও এক ইশতেহার প্রচারিত হয়।] এতে শঙ্কিত হয়ে ওঠে ব্রিটিশ সরকার। ১৯২৩ সালে মোহাজীর বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে পেশোয়ারের দায়রা আদালতে ‘কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা’ দায়ের হয়। ১৯২৩ সালের মে মাসে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করা হয়। ১৯২৪ সালের কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে এস.এ. ডাঙ্গে, নলিনী গুপ্ত এবং শওকত উসমানীর সাথে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই সময় চৌরিচৌরা মামলায় একদিকে ১৭২ জন কৃষকের ফাঁসির হুকুম হয়, অন্যদিকে কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় মুজফফর আহমদ সহ সকলের চার বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। সাধারণ কয়েদী হিসেবে মুজফফর আহমদকে পাঠানো হয় উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি জেলে। এখানে তিনি কঠিন যক্ষা রোগে আক্রান্ত হন ফলে দন্ডকাল শেষ হবার আগেই ১৯২৫ সালে তিনি মুক্তি পান
৩) লেবার স্বরাজ পার্টি ও লাঙল পত্রিকা:
এসময়ে কমরেড মুজফফর আহমদ এর উদ্যোগে বোম্বাই ও কলকাতায় কমিউনিস্টদের নিয়ে একটি পার্টি কমিটি গঠিত হয়েছিল। পরবর্তী সময় তারাই 'শ্রমিক কৃষক দলে'র ভেতর দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির নীতি কার্যকর করে তোলেন। কানপুর সম্মেলনে মুজফফর আহমদ যখন বোম্বাইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের পরিকল্পনা ব্যস্ত ছিলেন সেই সময় ১৯২৫ সালের পয়লা নভেম্বর কলকাতায় কাজী নজরুল ইসলাম এবং হেমন্ত কুমার সরকারের নেতৃত্বে ‘লেবার স্বরাজ পার্টি অফ দি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে নতুন একটি পার্টি জন্মলাভ করে।পার্টির মুখপত্র হিসেবে নজরুল ইসলামের পরিচালনায় প্রকাশিত হয় ‘লাঙল’। মুজফফর আহমদ কানপুর থেকে ফিরে এসে ‘লাঙল’ পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কমরেড আব্দুল হালিমও তাঁর সঙ্গে যোগ দেন।৪) গণবাণী থেকে গণশক্তি :
কমরেড হালিমের সঙ্গে ১৯২২ সাল থেকেই মুজাফফর আহমদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়। কয়েক মাস পর পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর লাঙলের নাম পরিবর্তন করে প্রকাশিত হয় ‘গণবাণী’। সম্পাদক হিসেবে গঙ্গাধর বিশ্বাসের নাম থাকলেও প্রকৃত সম্পাদক ছিলেন মুজফফর আহমদ। মার্কসবাদ ও বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কে বহু নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এখানেই আন্তর্জাতিক সঙ্গীত এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। মুজফফর আহমদ এর উপরেই ছিল পত্রিকার প্রধান দায়িত্ব। অর্থাভাবে মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যেত প্রকাশনা। সে যুগের কমিউনিস্ট মতবাদ প্রচারের কেন্দ্র ছিল ‘গণবাণী’, যা পরে ‘গণশক্তি’ নামে পরিচিত হয়।
৫) ১৯২৬ এর দাঙ্গা ও কমিউনিস্ট আন্দোলন :
১৯২৬ সালের মাঝামাঝি কলকাতার বুকে এক বীভৎস হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা সংঘটিত হলো। সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও সম্প্রীতির বাণী বহন করে আবার গণবাণী প্রকাশিত হয়। কমিউনিস্টরাই এই ঐক্যের জন্য ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে বিরাট ভূমিকা নেয়। ১৯২৬ সালের কঠোর পরিশ্রম এবং অর্ধাহারে-অনাহারে মুজফফর আহমদের স্বাস্থ্য আবার ভেঙে পড়ল।'গণবাণী'ও বন্ধ হয়ে যায়।
৬) কমিউনিস্ট পার্টির নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি :
১৯২৭ সালের ৩১ মে বোম্বাইয়ে কমিউনিস্টদের এক সম্মেলনে কমিউনিস্ট পার্টির নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। পার্টির কর্মসূচি ও গঠনতন্ত্র গৃহীত হয়। সঙ্গে একটি ইশতেহারও প্রকাশিত হয়। মুজফফর আহমদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং ঘাটে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।
১৯২৭-২৮ সালে ভারতের রাজনৈতিক আন্দোলন, বিশেষত শ্রমিক আন্দোলন এক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় আন্দোলনও তীব্রতর হয়ে ওঠে। ক্রমবর্ধমান শ্রমিক সংগ্রাম ও তাতে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ শাসকদের আতঙ্ক বেড়ে যায়। ফলে গণবাণী' অফিস তল্লাশি করে সমস্ত মার্কসবাদী পত্রপুস্তিকা ও বই বাজেয়াপ্ত করে। জানতে পারে, ১৯২৭ খড়গপুরে রেলকর্মীদের ধর্মঘট, বৃহৎ শিল্প কারখানায় ধর্মঘট,চটকল শ্রমিকদের ও বন্দর শ্রমিকদের ধর্মঘটে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন মুজফফর আহমদ। ১৯২৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মাদ্রাজে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালীন সময়ে সংগঠিত কমিউনিস্ট পার্টি গঠন সম্পর্কে কমিউনিস্টদের এক গোপন বৈঠকে তিনি যোগ দেন।
এই পর্বে ১৯২৮ সালে বেতন বৃদ্ধির জন্য কলকাতা কর্পোরেশনের ধাঙ্গড়, মেথর ও ঝাড়ুদারদের ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেবার জন্য তিনি গ্রেফতার হন।
৭) মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা :
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ফ্যাসিজমের উদ্ভব হয়েছে। পৃথিবীব্যাপী দেখা দিয়েছে ভয়াবহ আর্থিক মন্দা ও সংকট। এই পটভূমিতে ১৯২৮ সালের ১৫ ই জুলাই থেকে ১লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের ষষ্ঠ কংগ্রেসের অধিবেশন। এখানে ঔপনিবেশীক দেশগুলোর বিপ্লবী মুক্তি আন্দোলন, বিশ্ববিপ্লব ইত্যাদি নিয়ে কর্মসূচি গৃহীত হয় এবং পরাধীন দেশে বিপ্লবের দিকনির্দেশক আলাদা দলিলও গৃহীত হয়।
১৯২৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালীন সময়ে কমিউনিস্ট নেতারা কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সিদ্ধান্তগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক হয় শ্রমিক-কৃষকের পার্টির নাম বদলে শ্রমিকশ্রেণীর পার্টি কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করতে হবে। ১৯২৯ সালের জানুয়ারিতে কলকাতায় কমিউনিস্টদের আরেক গোপন সভায় নতুন করে গোপন ‘কমিউনিস্ট পার্টি’ পুনর্গঠিত হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেন কমরেড মুজফফর আহমদ। খবর পেয়ে ব্রিটিশ সরকার দমন পিড়ন শুরু করে। ১৯২৯ সালের ২০শে মার্চ, ব্রিটিশ সরকার মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ৩১ জন শ্রমিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে এবং মুজাফফর আহমদকে প্রধান আসামি করা হয়। ৩২ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে শ্রমিক-কৃষক দলের অফিস থেকে। ধৃত নেতাদের বিরুদ্ধে ভারত সম্রাটকে ভারত থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। পেনাল কোডের ১২১ এ ধারায় ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। এটা মিরাট কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলা নামে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে খ্যাত।
প্রায় চার বছর ধরে এই মামলা চলে। মিরাট আদালতে কমিউনিস্ট বন্দীরা যে দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছিলেন তা এক গুরুত্বপূর্ণ কমিউনিস্ট দলিল হিসাবে চিরস্মরণীয়। তিনি ১৯৩৬ সালে মুক্তি পান।
৮) ১৯৩৭ থেকে ১৯৪০ কাকাবাবু :
১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত বাংলায় কমিউনিস্ট পার্টির প্রাদেশিক কমিটিতে তিনি নেতৃত্ব দেন। অন্যান্য প্রদেশে, নেপাল ও বার্মায়ও কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তুলতে তিনি প্রত্যক্ষ সহায়তা করেন। এই সময়েও গোয়েন্দা পুলিশ তাঁর গতিবিধির ওপর কড়া নজর রাখতো। কৃষকদের মধ্যেও নবজাগরণ দেখা যায় এই সময়ে। জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদী সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকরা বিভিন্ন জায়গায় সংগ্রাম করছেন- সারা ভারত কিষান সভা গঠনেও তিনি যথেষ্ট পরিশ্রম করেন। তিনি এর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।১৯৩৯ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হলে ভারতে ব্রিটিশ সরকারও স্বাধীনতা আন্দোলন ও শ্রমিকশ্রেণীর ওপর দমননীতি প্রয়োগ করে। কমিউনিস্ট নেতাদের নামে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করে। ভারত রক্ষা আইনে পুলিশ ১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতা থেকে মুজফফর আহমদকে বহিষ্কারের আদেশ দেয়। যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থার মধ্যে পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে সমস্ত বিপদের ঝুঁকি নিয়ে তিনি পার্টির কাজ করে যান। গোপনে কাজ করার সময় তিনি ‘কাকাবাবু’ নামে পরিচিত ছিলেন।
স্বাধীন ভারতে : লেখক
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর তিনি কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলে তাঁকে আবার কারাবন্দী করা হয়। তিনি ভারত ও স্বাধীন ভারতে মোট ২০ বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন এবং প্রায় ৮ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি নিবর্তনমূলক আইনে আটক ছিলেন। ১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তিনি যথেষ্ট পরিশ্রম করেন। ১৯৫১- ৫২ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কমিটির সম্পাদক ছিলেন। ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকার নিজস্ব মেশিন ও 'গণশক্তি' প্রেস গঠনের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।১৯৬৯ সালের ডিসেম্বরে তাঁর ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ প্রকাশিত হয়। এর ইংরাজি অনুবাদও প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশিত হয়।
* ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল।
* ১৯৭৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর কলকাতায় তাঁর জীবনাবসান হয়। তাঁর স্মরণে কলকাতার রিপন স্ট্রিটকে ‘মুজাফফর আহমদ স্ট্রিট’ নামকরণ করা হয়েছে।
* ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল।
* ১৯৭৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর কলকাতায় তাঁর জীবনাবসান হয়। তাঁর স্মরণে কলকাতার রিপন স্ট্রিটকে ‘মুজাফফর আহমদ স্ট্রিট’ নামকরণ করা হয়েছে।
কমিউনিস্ট আন্দোলনে অবদান :
১৯১৯-২০ সালে সাহিত্য ও রাজনীতি মিলিয়ে সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যে জীবন তিনি শুরু করেছিলেন, একটানা ৫৩ বছর ধরে অব্যাহত আত্মত্যাগ ও অবদানের মহিমায় তা চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। প্রচন্ড আর্থিক অনটন, অর্ধাহার, অনাহারের মধ্যেও মতাদর্শগত সংগ্রামে মার্কসবাদ - লেনিনবাদের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। মানুষ ও কর্মীদের প্রতি গভীর মমত্ববোধ, দেশের প্রতি ও আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রতি গভীর ভালবাসা, সুলেখক ও সংগঠক হিসেবে তাঁর অবদান, তাঁকে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসের পাতায় অমর করে রেখেছে। তাই তাঁর আত্মত্যাগ ও অবদান ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন